শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগে কিনি মাল, পরে ডাকি টেন্ডার নীতিতে চলছে পশ্চিম রেল

কেনাকাটার নামে লুটপাটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়েতে নানা অজুহাতে চলছে কেনাকাটা। প্রয়োজন নেই এমন জিনিসও কেনা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এই কেনাকাটার নামে চলছে লুটপাটের মহোৎসব। কেনাকাটা করতে গিয়ে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে না। পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ নিয়ে কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা।   রাজশাহী স্টেশনের জন্য ফার্নিচার, ট্রেনের বগি চিহ্নিত করতে এলইডি লাইট ও অভ্যর্থনার জন্য এলইডি লাইট সরবরাহ করেছেন আলমগীর হোসেন নামের এক ঠিকাদার। মাস দুয়েক আগে এসব মাল সরবরাহ করা হয় এবং স্টেশনে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজের আস্থাভাজন এই ঠিকাদারকে দিয়ে আগেই সরঞ্জামগুলো সরবরাহ নেওয়া হয়েছে।  অপ্রয়োজনে কেনা হয়েছে স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের জন্য কিছু ভিআইপি চেয়ার (গদিওয়ালা)। চেয়ারগুলোর জায়গা না হওয়াই স্টেশনের যাত্রীদের অপেক্ষারত কক্ষের বাইরেও রাখা হয়েছে বেশকিছু চেয়ার। আর সেগুলোতে সাধারণ যাত্রীরা এমনকি ভিক্ষুকরাও ইচ্ছামতো বসে থাকছেন। ফলে এরই মধ্যে গদিগুলো নষ্ট হতে বসেছে। অথচ বছর খানেক এই স্টেশনেই চেয়ার সরবরাহের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা লুটপাট করা হয়েছে।  গত বছর এই স্টেশনে ১৭-১৮ হাজার টাকার স্টিলের চেয়ার সরবরাহের নামে ৪০-৪৫ হাজার টাকা করে বিল উত্তোলন করা হয়। আর ২৫-৩০ হাজার টাকার সোফা সেট সরবরাহ করে বিল উত্তোলন করা হয় ৮০-৮৫ হাজার টাকা করে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরঞ্জাম কর্মকর্তার দফতরের মাধ্যমে      এলটিএম (লিমিটেড টেন্ডার মেথড) দরপত্রের মাধ্যমে ওই ফার্নিচারগুলো সরবরাহ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাট করা হয়। রেলওয়ে সূত্র মতে, এবার এলটিএম বা দরপত্র না করেই রাজশাহী স্টেশনে বগিচিহ্নিত লাইট, ফার্নিচার ও অভ্যর্থনার জন্য এলইডি লাইট সরবরাহ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বগিচিহ্নিত লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেলওয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য দরপত্র হয় তিনটি দফতর থেকে। দফতরগুলো হলো প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দফতর, প্রকৌশল দফতর এবং প্রধান টেলিকমিউনিকেশন দফতর। রেললাইনের বাইরে যেসব কেনাকাটা হয় সেগুলো সাধারণত প্রধান সরঞ্জাম কর্মকর্তার দফতরের মাধ্যমে। বিভিন্ন দফতর থেকে প্রয়োজনীয় মালামালের চাহিদা পাওয়ার পরেই সরঞ্জাম শাখা দরপত্র, কোটেশন অথবা এলটিএমের মাধ্যমে সেই মালামালগুলো ঠিকাদারকে সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দিয়ে থাকেন। এরপর ঠিকাদার সেই মালগুলো সরবরাহ করে সরঞ্জাম শাখা থেকে বিল তুলে নেন। কিন্তু এবার দরপত্রের কোনো প্রক্রিয়া না করে আগেই পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে মালামাল সরবরাহ করে নিয়েছেন প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ। এর মধ্যে অধিকাংশ মাল নি¤œমানের বলেও অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম বলেন, ‘বগি চিহ্নিত যেসব ডিজিটাল লাইট সরবরাহ করা হয়েছে, সেগুলোর কিছু জ্বলছে, আবার কিছু কিছু এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিকাদার আমাদের কাছ থেকে সময় চেয়েছেন।’ দরপত্র ছাড়া সরবরাহ কে বা কারা করেছেন তা জানেন না বলে দাবি করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘টেন্ডার ছাড়া কীভাবে মালামাল সরবরাহ হলো বা স্টেশনে লাগলো সেটি জানি না। এ রকম তো হয় না।’ তবে মালামালগুলো সরবরাহের নির্দেশদাতা প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘আলমগীর হোসেন ঠিকাদার মালগুলো সরবরাহ করেছেন। তবে টেন্ডার করা হয়নি। প্রয়োজন তাই টেন্ডারের আগেই এই মালামালগুলো স্টেশনে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এগুলো স্টেশনে লাগানো বা ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর