শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগ্রাসনের কবলে চট্টগ্রামে পুকুর দীঘি

দর্শকের ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মহানগরের মাঝির ঘাট এলাকার বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে দিনদুপুরেই। অন্যদিকে, নগরের চান্দগাঁওয়ের পাঠানিয়াগোদা বায়তুন নুর জামে মসজিদের শতবর্ষী পুকুরও চলছে ভরাট।  পর্যায়ক্রমে ভরাট করা হচ্ছে হালিশহর রামপুর এলাকার খাজা দীঘি। ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসছে নগরের প্রসিদ্ধ আসকার দীঘি, রানীর দীঘি, বলুয়ার দীঘি। এভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আগ্রাসনের কবলে পড়েছে নগরের শতবর্ষী ও ঐতিহ্যবাহী পুকুরগুলো। সঙ্গে কমছে জলাধারও। অভিযোগ আছে, নগরের পুকুর ভরাটের প্রতিযোগিতা চললেও চুপচাপ পরিবেশ অধিদফতর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ফলে যে যখন যেভাবে পারছে দখল-ভরাট করে করছে বহুতল ভবন, মার্কেটসহ নানা স্থাপনা। ফলে কমছে পুকুর-জলাধার। বাড়ছে নানা ঝুঁকি। চরম বিপাকে পড়তে হয় অগ্নিদুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায়। জানা যায়, সরকারি সংস্থার কাছে নগরের পুকুরের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। চসিকের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত ‘উন্নয়ন ও সফলতা’ শীর্ষক বইতে নগরের প্রায় সব তথ্য থাকলেও পুকুর নিয়ে কোনো তথ্য নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকৃতির ওপর অত্যাচার, প্রকৃতিকে বিরক্ত করা, প্রকৃতিকে প্রাকৃতিকভাবে  থাকতে না দেওয়াÑ এসব অত্যন্ত অনৈতিক। প্রকৃতির স্বকীয়-স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে আঘাত করা যায় না। আঘাত করলে এর বিরূপ ফল অনিবার্য। এর সরাসরি খেসারত দিতে হয় আমাদেরকেই। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়, ডোবা, বৃক্ষরাজিÑ আমাদের স্বার্থেই এসব অক্ষত রাখা জরুরি। এ ব্যাপারে সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।’ পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম নগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযান, জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় সব আইন প্রয়োগ করি। তবে অপরাধ কখনো থেমে থাকে না। তবে আমরাও সতর্ক ও সচেতন আছি।’ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নগরে প্রতিনিয়ত পুকুর ভরাটের কারণে বর্তমানে অগ্নিদুর্ঘটনায় পানির সংকটে পড়ি।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে ক্রমাগত কমছে পুকুর। বিভিন্ন গবেষণাপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে একসময় ছিল দেওয়ান গৌরী শংকর দীঘি, লাল দীঘি, টেকচাঁদের দীঘি, আমির খাঁর দীঘি, শিব খাঁর দীঘি, হাজারীর দীঘি, এতিম শাহর দীঘি, খঞ্জর দীঘি, রানীর দীঘি, নুনু খাঁর দীঘি, শিবলালের দীঘি, মাজাবির দীঘি, মৌলভী পুকুর, আগ্রাবাদ ঢেবা, ভেলুয়ার দীঘি, জোড়া দীঘি ও কমলদহ দীঘি। এসব পুকুর এখন অস্তিত্বহীন। অন্যদিকে, দিনদুপুরে চোখের সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে নগরের পুকুরগুলো। ভরাটের কবলে পড়েছে আন্দরকিল্লার রাজা পুকুর, দেওয়ানবাজারের দেওয়ানজি পুকুর, নন্দনকানন রথের পুকুর, চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর, ফিরিঙ্গিবাজার ধাম্মো পুকুর, বহদ্দারহাটের মাইল্যার পুকুর, চকবাজারের কমলদহ দীঘি, কাট্টলীর সিডিএ এলাকার পদ্মপুকুর ও উত্তর কাট্টলীর চৌধুরীর দীঘি, ষোলশহর হামজারবাগ এলাকার হামজা খাঁ দীঘি, খতিবের হাট পুকুর, সংকুচিত হচ্ছে এনায়েত বাজার এলাকার সুপ্রাচীন রানীর দীঘি, অযত্ন-অবহেলায় আছে আসকার দীঘি, পাহাড়তলীর শতবর্ষী পদ্মপুকুর, ক্রমে ভরাট করা হচ্ছে বড় মিয়ার মসজিদ পুকুর, হালিশহর এলাকার খাজা দীঘি, চান্দগাঁওয়ের মুন্সি পুকুর, বাকলিয়ার আবদুল্লাহ সওদাগর পুকুর, আশকার দীঘি, আগ্রাবাদ ঢেবার দীঘি, মিনামার দীঘি, কর্নেল দীঘি, কর্নেল হাট দীঘি, হাজারীর দীঘি, কারবালা পুকুর, ভেলুয়া সুন্দরীর দীঘি, কাজীর দীঘিসহ নগরীর পুকুর ও দীঘি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর