রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রেষণ যন্ত্রণায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রেষণ যন্ত্রণায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ করা হয়েছে প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে। আইনগত বাধা থাকার পরও এই নিয়ম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে ক্ষুব্ধ বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তারা। প্রেষণে নিয়োগের কারণে কর্মকর্তারা দায়িত্ব নিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন নানা অনিয়মে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র মোতাবেক চেয়ারম্যান ছাড়া শিক্ষা বোর্ডের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে প্রেষণে নিয়োগের আইনগত কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলেজ পরিদর্শক, উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বর্তমান সচিব অধ্যাপক ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (ইসলামের ইতিহাস বিভাগ) দুই মাস আগে প্রেষণে নিয়োগ পেয়েছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদটি বর্তমানে শূন্য। এখানে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেবাশীষ রঞ্জন রায় দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজ পরিদর্শক পদে গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান, উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) পদে মো. বাদশা হোসেন (অর্থনীতি) ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে এবং দীর্ঘ ৬ বছর থেকে (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে) বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক দেবাশীষ রঞ্জন রায় (ইতিহাস)।    প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন কর্মকর্তারা। সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক আবুল হায়াত রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। এর এক মাস পার না হতেই তাকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। তারা চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করে। ২০ আগস্ট আবুল হায়াতকে      ওএসডি করা হয়।   আবুল হায়াতের পর সচিব হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। আগে তিনি শিক্ষা বোর্ডের সচিব ছিলেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়মে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি, কাজ না করে অর্থ তুলে নেওয়া, বারে বারে কাজ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, পছন্দের লোক নিয়োগসহ না অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়ায় দুদক থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের ক্ষেত্রভুক্ত বিভিন্ন নথিপত্র ও ফাইল সরবরাহের জন্য রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে নোটিস পাঠায়। গত বছরের ২৫ জানুয়ারি দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল নোটিসসহ শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান। কিন্তু চেয়ারম্যান দফতরে থাকার পরও সাক্ষাৎ দেননি। দুদকের নোটিসও গ্রহণ করেননি। অবশেষে আবুল কালাম আজাদকেও ওএসডি করা হয়। শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব আনোয়ারুল হক প্রামাণিকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরস্পরের সহযোগিতায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। এদিকে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পেয়ে শিক্ষা বোর্ডে বিভিন্ন সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বোর্ডে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবমূল্যায়ন, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের হয়রানি, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এ বছরের মার্চে রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সদস্য মো. আবু আসলাম নামে এক আইনজীবী বাদী হয়ে রাজশাহীর সদর সিনিয়র জজ আদালতে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষা বোর্ডের এসব কর্মকর্তাকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়ে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব দিতে পারে। নির্ধারিত রুলস আছে বলেই এসব পদে নিয়োগ দিয়েছে, রুলস না থাকলে দিতে পারে? শুধু এক জায়গায় (শিক্ষা বোর্ড) না সব জায়গায় আছে। গভর্নমেন্ট (সরকার) ইচ্ছা করলে দিতে পারে।’

 

সর্বশেষ খবর