সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সিলেটের সোনাতিকান্দি বধ্যভূমি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সোনাতিকান্দি। সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রেললাইন। সোনাতিকান্দি এলাকার এই রেললাইনের উভয় পাশজুড়ে শুধু ঝোপঝাড়। অথচ এই ঝোপঝাড়ের নিচে শুয়ে আছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অসংখ্য বাঙালি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে অসংখ্য বাঙালিকে এখানে পুঁতে রেখেছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এই বধ্যভূমি। ঝোপের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। নতুন প্রজন্মকে পাকবাহিনীর বর্বরতার ইতিহাস জানাতে বধ্যভূমিটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রবীণ লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সিলেট-ঢাকা রেললাইনের দক্ষিণ সুরমার সোনাতিকান্দিতে পাকহানাদার বাহিনী গুলি করে প্রায় তিন শতাধিক লোককে হত্যা করে। পরে তাদের লাশ রেললাইনের পাশে মাটিচাপা দেয়। দক্ষিণ সুরমার বন্দরঘাট কৃষাণপুরের উস্তার আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান আর্মি গণহত্যা চালিয়ে সোনাতিকান্দিতে লাশ মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর    এই বধ্যভূমি সম্পর্কে অনেকেই জানতেন। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বধ্যভূমিটি ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে যে বধ্যভূমি ছিল তা এখন বোঝার উপায়ই নেই। নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগই এই ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী সোনাতিকান্দি বধ্যভূমির স্মৃতি রক্ষায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যুর কারণে এ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে অন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি রক্ষায় উদ্যোগী হননি।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সোনাতিকান্দি বধ্যভূমিতে শত শত মানুষ খুন করে পাকহানাদার বাহিনী মাটিচাপা দিয়েছিল। যুদ্ধের পর এই বর্বরতার গল্প মানুষের মুখে মুখে ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পরও দেশের সব বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। অবহেলা অনাদরে পড়ে আছে সোনাতিকান্দি বধ্যভূমিও। ঝোপঝাড়ের আড়ালে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এই স্মৃতি। বধ্যভূমিটি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হবে।

 

সর্বশেষ খবর