মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিঃস্বার্থ কাজ করে যেতে চাই

আরাফাত মুন্না

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিঃস্বার্থ কাজ করে যেতে চাই

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী

ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। একাধারে পেশাজীবী রাজনীতি করছেন, অবদান রেখেছেন জাতীয় রাজনীতিতেও। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেহেদী ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। মেহেদী রাজনীতিতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার থেকেই। ভূমিকা রেখেছেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। কর্মজীবনেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ বছর ৬ নভেম্বর আইন পেশায় ৩৫ বছরও পূর্ণ করেছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেই নিঃস্বার্থভাবে দল ও মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী তুলে ধরেন তার রাজনৈতিক জীবনের নানা গল্প। রাজনীতিতে আসার কারণ সম্পর্কে ড. মেহেদী বলেন, ‘১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকা  এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার নৃশংস হত্যা স্কুলজীবনে আমার কোমল মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বেলেছিল। সেই প্রতিশোধের অঙ্গীকার থেকেই ’৭৫ সালেই আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করি। আমি তখন ভাওয়াল চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কাজ করতে থাকি। কলেজ জীবনে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের জন্য কাজ করি। পরে আমি কাপাসিয়া থানা ছাত্রলীগের (জালাল-জাহাঙ্গীর) আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছিলাম।’ মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, ‘কলেজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে স্নাতক ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলাম। আমাকে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মান্নান-নানক) কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য করা হয়। পরের বছর ২০ নভেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। পরে আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করি।’ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি তর্পণ করে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও আমি সক্রিয় ছিলাম। সব সময় সব মিছিলের সামনের সারিতেই ছিলাম। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নূর হোসেন শহীদ হন। ওইদিন আমিও মারাত্মক আহত হই। মারা গেছি ভেবে প্রথমে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার তখন জ্ঞান ছিল না। পরে জীবিত আছি বুঝতে পেরে আমাকে ইমারজেন্সিতে আনা হয়। চিকিৎসকরা আমাকে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখে পুলিশ। আড়াই মাস পর মুক্তি পাই। ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ২২টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐকের মিছিলে আমি সব সময় সামনের সারিতেই ছিলাম।’

পেশাজীবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রসঙ্গে মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, ‘স্বৈরাচারের পতনের পর আইনজীবী হিসেবে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯১ সাল থেকে আইন অঙ্গনে সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিটি কর্মকাে  সম্পৃক্ত ছিলাম। ২০০১ সালে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হই। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আমি রাজপথের প্রতিটি মিছিলের কর্মী ছিলাম। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের এডিসি কহিনূরের নির্যাতনের প্রতিবাদে নিজে বাদী হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেছি। ২০০২ সালের ১০ ডিসেম্বর আমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলায় ডিটেনশন দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমার বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে বোমা হামলার মামলা দেওয়া হয়।’

১/১১-এর সময় নিজের ভূমিকা তুলে ধরে মেহেদী বলেন, ‘১/১১-এর কঠিন সময়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতারের দিন থেকে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্তিলাভের মুহূর্ত পর্যন্ত আমি সক্রিয়ভাবে রাজপথে ও আদালতে দায়িত্ব পালন করেছি। জননেত্রীর পক্ষে আইনজীবী পেশাজীবীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তাঁর মুক্তির জন্য বিবৃতি প্রদান করি। বিশেষ আদালতে প্রতিদিন উপস্থিত হয়ে দায়িত্ব পালন করি।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে আমাকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য করা হয়। পরপর দুটি কাউন্সিলে আমি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম।। সেজন্য আমি আজীবন জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে ড. মেহেদী বলেন, ‘২০১২-১৩ সেশনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সম্পাদক পদে জয়লাভ করি। ওই সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন ছিল সমন্বয় পরিষদ।’

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং জাতির পিতাকে কটাক্ষ করায় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের অনুমতি নিয়ে নিজে বাদী হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করেছি, মামলাটি এখনো চলছে। এরপর বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা বিলুপ্ত করে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্তদের দলীয় নেতৃত্বে রাখার বিষয়টি সংযোজনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে দায়ের করা রিটেও আমি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।’

পেশাগত জীবনে মানবকল্যাণে কাজ করা প্রসঙ্গে মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বলেন, ‘১৯৮৫ সালের ৬ অক্টোবর আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। সব সময় গরিব-অসহায় সাধারণ মানুষের মামলা স্বল্প খরচে পরিচালনা করছি। আইন পেশার মানোন্নয়ন ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে আমি সব সময় সচেতন। মানবতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠা করাই আমার পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্য।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর