বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আজিমপুর মাতৃসদনে দুর্নীতি ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে ১৭ জন চিকিৎসকসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো করেন সংস্থাটির উপপরিচালক আবুবকর সিদ্দিক। মামলায় বাজারদরের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে ওষুধ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও প্যাথলজিসামগ্রী ক্রয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার পাশাপাশি এই আসামিদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুদকের পক্ষ থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে কমিশনে প্রতিবেদন দেন দুদকের উপপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক। এরপর কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়। জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাত জাহান, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য পারভীন হক চৌধুরী, মাতৃসদনের সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুন, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য চিন্ময় কান্তি দাস, সাবেক মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মাহফুজা দিলারা আকতার।

 মাতৃসদনের মেডিকেল অফিসার ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য নাজরিনা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব (বাজারদর যাচাই কমিটি) জহিরুল ইসলাম, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য জেবুন্নেসা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি রওশন হোসনে জাহান, মাতৃসদনের সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. লুৎফুল কবীর খান, মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য রওশন জাহান, সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক হালিমা খাতুন, মাতৃসদনের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মো. আমীর হোচাইন, সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মোছা. রইছা খাতুন ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম আহসান, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) নাদিরা আফরোজ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার, মেডিকেল অফিসার আলেয়া ফেরদৌসীকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঠিকাদারদের মধ্যে মনার্ক এস্টাব্লিশমেন্টের মো. ফাতে নূর ইসলাম, মেসার্স নাফিসা বিজনেস কর্নারের স্বত্বাধিকারী শেখ ইদ্রিস উদ্দিন (চঞ্চল), সান্তনা ট্রেডার্সের মালিক নিজামুর রহমান চৌধুরী দুদকের মামলায় আসামি হয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত চার অর্থবছরের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারকে ওষুধ সরবরাহের বিপরীতে ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ খুচরা মূল্য ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মূল্য অনুযায়ী ওই একই ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৮ টাকা। বাকি টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এভাবে চার অর্থবছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর