শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কৃষিজমিতে পুকুর খননের হিড়িক

রাজশাহীতে চার বছরে কৃষিজমি কমেছে ১৫ হাজার হেক্টর

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

কৃষিজমিতে পুকুর খননের হিড়িক

রাজশাহীতে নির্বিচারে কৃষিজমিতে চলছে পুকুর খনন। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থেমে নেই পুকুর খনন। নানাভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অথবা গোপনে চলছে খননের কাজ। এ কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। তবে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু দিনে অভিযান চালিয়ে যে পুকুর খনন বন্ধ করা হচ্ছে, রাতেই আবার সেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো উপজেলায় ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের সহযোগিতাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে গত চার বছরে কৃষিজমি কমেছে ১৫ হাজার হেক্টর। রাজশাহীতে উপর্যুপরি পুকুর খননের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত রাজশাহীর বাগমারা, পবা, গোদাগাড়ী, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর পরও দু-একটি উপজেলায় প্রশাসন পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও লাভ হচ্ছে না। পবা উপজেলায় প্রশাসন নিয়মিতই অভিযান চালাচ্ছে। তার পরও উপজেলার বড়গাছি এলাকায় পুকুর খনন চলছে। গ্রামের আনারুল ইসলাম এ পুকুর খনন করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আনারুল ইসলাম পুকুর খননকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বাইরের পার্টির সঙ্গে মধ্যস্থতা করে এলাকায় পুকুর খনন করাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি বড়গাছি বিলেই ১০০ বিঘা পুকুর খনন করিয়েছেন। আরও ৮ বিঘায় খননকাজ চালাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করলে ভ্রাম্যমাণ  আদালত দিনে অভিযান চালিয়ে খননকাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রাতে আবার ড্রেজার নিয়ে গিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। পবা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল হায়াত বলেন, অল্প দিন আগে যোগদান করেছেন। তবে পুকুর খনন কেউ করছে- এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে। এ বছর পবা উপজেলায় ৩০টি অভিযান চালানো হয়েছে। ২৫টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু দু-এক দিন পর তারা আবার খনন শুরু করে।

একই অবস্থা চলছে জেলার অন্য উপজেলাগুলোয়। তানোরের চান্দুড়িয়া এলাকার বিলের প্রায় সিংহভাগ জমি এখন পুকুর হয়ে গেছে। রাজশাহী কৃষি বিভাগ বলছে, কয়েক বছর ধরেই গোদাগাড়ী, পবা, তানোর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, মোহনপুর, বাঘা ও চারঘাট এলাকায় ফসলি জমিতে পুকুর-দিঘি খননের হিড়িক চলছে। প্রতি বছরই ছোটবড় ১ হাজার পুকুর কাটা হচ্ছে। গত আট বছরে নতুন ৫ হাজার পুকুর কাটা হয়েছে। এসব পুকুরের কারণে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া সহস্রাধিক ইটভাটায় খেয়ে ফেলেছে আরও ৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমি। যেটুকু কৃষিজমি আছে তাতে ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও জলাবদ্ধতায় ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামশুল হক বলেন, ‘বেশির ভাগ পুকুর কাটা হয়েছে নিষ্কাশন নালা, জলাধারের সেতু-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে। ফলে কম বৃষ্টিতেই পুকুর-দিঘিসংলগ্ন কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে হাজার হাজার হেক্টর উর্বর ফসলি জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না চাষিরা। এর ফলে ধান, পাট, গম, আলু, সবজি, মরিচ, সরিষা, পিয়াজ ও রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী পানের উৎপাদনই শুধু কমছে না গবাদি পশুর বিচরণভূমিও নষ্ট হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন সভায় কৃষি বিভাগ থেকে এসব বিষয়ে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও বন্ধ হয়নি পুকুর কাটা।’

সর্বশেষ খবর