বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে তো অপকর্ম করা নয়

---- নঈম নিজাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে তো অপকর্ম করা নয়

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত মাসিক লেকচার সেশনে গতকাল প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেছেন, কিছু মানুষের অতিলোভ আমাদের সর্বনাশ করে দিচ্ছে। এটা থামানো সম্ভব হলে বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন উচ্চতায় দাঁড়াবে। কিছু মানুষের জন্য স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণ পিছিয়ে পড়তে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে তো অপকর্ম করা নয়, লুটপাট করা নয়। চেতনায় যদি রাষ্ট্র থাকে, বাংলাদেশ থাকে, বঙ্গবন্ধু থাকে- এ দেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না। তিনি বলেন, সবার আওয়ামী লীগার হওয়ার দরকার নেই। শিক্ষক পাঠদান করবেন, ডাক্তার রোগী দেখবেন,  প্রকৌশলী, আইনজীবীদের মিছিল করার দরকার নেই। পেশাজীবীরা সবাই যদি যার যার জায়গায় থেকে শুধু নিজের দায়িত্বটুকু পালন করেন, তাহলে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমাদের নৈতিকতার জায়গা যদি শক্ত থাকে, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি যদি বন্ধ করা যায়, আমাদের কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। রাজধানীর আইডিইবি ভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত মাসিক লেকচার সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আইডিইবি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শামসুর রহমান। বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত জনপ্রিয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, মানবসভ্যতার শুরুতেই প্রকৌশলের যাত্রা। রোমান সভ্যতার বিকাশলগ্নে বলা হয়েছিল, ‘আমার শুধু সৈনিক দরকার ও প্রকৌশলীর দরকার। সৈনিকরা দেশ জয় করবে, প্রতিরক্ষা দেবে আর প্রকৌশলীরা নাগরিক সুবিধা দিয়ে সভ্যতা গড়ে তুলবে।’ তিনি বলেন, আপনারা সেই প্রকৌশলী, যারা রাষ্ট্রকে নতুন যাত্রায়, নতুন মাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার কাজ করেন। গ্রাম ও শহরের উন্নয়নের অংশীদার আপনারা। একসময় কল্পনাও করিনি পদ্মা সেতু হবে। এখন এটা বাস্তবতা। বঙ্গবন্ধুকন্যা উন্নয়নের এই স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্য মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হয়, স্বপ্ন জয় করতে হয়। নিজের দায়িত্বটুকু পালন করতে হয়। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। তিনি বলেন, আমরা দেখছি আওয়ামী লীগ নিজ দলের লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটা ভালো উদ্যোগ। আমরা এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। এটা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। নিজের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে নঈম নিজাম বলেন, সরকারে আসার আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে সফরে যেতাম আমরা কয়েকজন। এখন যেদিকে তাকাই সবাই আওয়ামী লীগ। এত আওয়ামী লীগার কখনো দেখিনি। এত আওয়ামী লীগার কোত্থেকে এলো বুঝে আসে না। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা  চলতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে অপকর্ম করা নয়, লুটপাট করা নয়। চেতনা মানে দায়িত্বশীলতা। আমাদের স্লোগানের রাজনীতির দরকার নেই। সচিবকে, ডিসি বা ইউএনওকে কেন রাজনৈতিক কর্মী হতে হবে? আপনি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে আপনার কাজটি করুন। শিক্ষক মিছিল করলে পড়াবেন কখন, ডাক্তার মিছিল করলে রোগী দেখবেন কখন? উন্নয়ন করতে হলে, স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, আইনজীবী, বিচারপতি, ব্যুরোক্র্যাটসহ সবাইকে যার যার জায়গা থেকে শুধু নিজ দায়িত্বটুকু পালন করে যেতে হবে।

তিনি দুঃখ করে বলেন, এখন সাংবাদিক সাংবাদিক নেই। প্রকৌশলী প্রকৌশলী নেই, আইনজীবী আইনজীবী নেই। দেশে এখন নতুন নতুন বড়লোক তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে তা মেরে দিয়ে বড়লোক হচ্ছে। বাপদাদার ঠিকানা নেই, গ্রুপ অব কোম্পানি খুলে ঋণের টাকা মেরে দুবাই চলে যাচ্ছে। দেশের জনতা জাগ্রত থাকলে এটা সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, নীতিমালা ও বাস্তবায়নের জায়গাটা যদি যথাযথ থাকে আমরা অনেক দূর যাব। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ছাড়া উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে, নতুনভাবে নতুন চেতনায় জাগিয়ে তুলতে হবে। আমরা স্বপ্নের জায়গাটা যদি জাগিয়ে তুলতে পারি, নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। মানুষ যদি পরিশ্রম করে, নীতি-নৈতিকতার মধ্যে থাকে, আমরা যদি স্বপ্ন জাগিয়ে রাখতে পারি, মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে রাখতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর