শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফ্ল্যাটের খোঁজে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা

রিহ্যাব আবাসন মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্ল্যাটের খোঁজে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা

কেউ খুঁজছেন ফ্ল্যাট। কেউ প্লট। আবার কারও প্রয়োজন গৃহঋণ। সবার লক্ষ্য একটাই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে স্বপ্নের সুন্দর আবাসন। সেই স্বপ্ন পূরণে আসা নগরীর মধ্যবিত্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল নামে গতকাল রিহ্যাবের আবাসন মেলায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় প্রতিটি স্টলে ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। ব্যাপক সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আবাসন খাতের উদ্যোক্তারাও। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- রিহ্যাব আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী শীতকালীন এই আবাসন মেলার পর্দা নামছে আজ। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, সকালে বৈরী আবহাওয়া থাকায় তুলনামূলকভাবে কম ক্রেতা প্রবেশ করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। আর দুপুরের পর থেকে ব্যাপক ক্রেতাসমাগম হয়। বিকালে পরিপূর্ণ হয় মেলা প্রাঙ্গণ। দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল, প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া মিলন, সহ-সভাপতি ও মেলা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ প্রমুখ। মেলার কো-স্পন্সর হিসেবে দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডও মেলায় অংশ নিয়েছে। রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া মিলন বলেন, ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে এই ফেয়ারের আয়োজন। বিভিন্ন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান মেলায় তাদের পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরছেন। মেলা শেষে অনেকে ফ্ল্যাট বা প্লট কিনবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, এ বছর মেলায় ক্রেতাসমাগম বেশি। মেলায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। মধ্যবিত্তদের জন্য একটি গৃহঋণ তহবিল খুবই জরুরি। সবার ইচ্ছা আছে একটি সুন্দর ফ্ল্যাটের। কিন্তু সামর্থ্যরে ঘাটতি রয়েছে অনেকের। তৈরি ফ্ল্যাটের প্রতি আগ্রহ একটু বেশি।  এদিকে মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা তাদের ফ্ল্যাট ও প্লটের বিস্তারিত ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগের জন্য তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর সংগ্রহ করছেন। আবার গ্রাহকদের কেউ কেউ পছন্দ মতো ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছেন। ফ্ল্যাটের স্থান, দাম, জায়গার পরিমাণসহ নানা তথ্য জানছেন তারা। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি, ফ্রিজ, আসবাবপত্রসহ নানা অফার দিচ্ছে। এর মধ্যে ট্রপিক্যাল হোমসে ফ্ল্যাট বুকিং দিলে গাড়ি দেওয়ার অফার দিচ্ছে। নাভানা রিয়েল এস্টেট ঘর সাজাতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার আসবাবপত্র দেওয়ার অফার দিচ্ছে। ক্রেতারাও সাধ্যের মধ্যে ফ্ল্যাট কেনার জন্য বিভিন্ন অফারের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি দামের বিষয়ে দর কষাকষি করছেন। মিরপুর থেকে মেলায় এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরাফাত হোসেন খান। তিনি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেডের স্টলে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে একটি প্লট কিনতে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে। আরাফাত হোসেন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে আবাসন প্রকল্প সফলভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বসুন্ধরার সুনাম আছে। প্রকল্পটি অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে হওয়ায় সেখানে ভবিষ্যতে একটি বাড়ি করতে চাই। সে লক্ষ্যে একটি প্লট বুকিং দেওয়ার বিষয়ে আলাপ করেছি। ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এবং প্রধান বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বসুন্ধরার প্রকল্পে প্লট বা জমি কিনতে ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। তাদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেড জানিয়েছে, দেশে বেসরকারি আবাসনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক অনুমোদিত সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। এবারের মেলায় বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের কিছু রেডি প্লট আনা হয়েছে। আছে কমার্শিয়াল প্লটও। কিউ ও পি এক্সটেনশন এবং আর ব্লকে প্লট বরাদ্দ চলছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের সাশ্রয়ী মূল্যে ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তি সুবিধা দিচ্ছে। প্রতি কাঠায় মাসিক ১৫ হাজার টাকার ৬০টি দীর্ঘমেয়াদি কিস্তি সুবিধাও আছে। বসুন্ধরা গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এল পি গ্যাস লিমিটেডের স্টলেও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। তারা এলপি গ্যাসের ব্যবহার সম্পর্কে জানার ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড জানিয়েছে, ২০ বছর ধরে দেশের সর্ববৃহৎ এই এলপি গ্যাস এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। এবারের মেলায় এলপিজির স্টলে ৪০টি ধাপে তৈরি হওয়া সবচেয়ে নিরাপদ বসুন্ধরা এলপিজি সিলিন্ডারের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করা হচ্ছে। দর্শনার্থীরা জানতে পারছেন, এলপি গ্যাসের নিরাপদভাবে ব্যবহারের বিভিন্ন নিয়মাবলি। এদিকে রিহ্যাবের শীতকালীন মেলায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ মিলছে। কম সুদে এই ঋণ দিচ্ছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সিটি ব্যাংকের ঋণের হারও ১০ শতাংশের নিচে। কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। ঋণ সম্পর্কে তথ্য জানতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলে ভিড় করছেন ক্রেতারা। মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে জানা যায়, ব্র্যাক ব্যাংক দিচ্ছে ১০ শতাংশ সুদে হাউস লোন। এই ব্যাংকটিও প্রসেসিং ফি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। মিউচুয়াল ট্রাস্টের সুদ হার ১০ দশমিক ৫, প্রাইম ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, ডেল্টা ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, আইডিএলসি সার্ভিস হোল্ডারদের জন্য ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও ব্যবসায়ীদের জন্য ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, লংকাবাংলা ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ১১, স্ট্যান্ডার্ড ১১, ন্যাশনাল হাউজিং ১১ এবং আইপিডিসি ১১ শতাংশ সুদে লোন দিচ্ছে। আর আইএফআইসির সুদ হার ১০ থেকে ১১ শতাংশ। মেলায় ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে আসা ক্রেতাদের অনেককেই ঋণ নিতে ব্যাংকের স্টলে খোঁজ নিতে দেখা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর