সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী আর নেই। গতকাল সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই কূটনীতিকের মৃত্যু হয়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।  হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্র রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার। এ ছাড়া শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। প্রায় ছয় বছর দিল্লিতে দায়িত্ব পালন শেষে গত নভেম্বরে দেশে ফেরেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মোয়াজ্জেম আলী ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওয়াশিংটনে কর্মরত অবস্থায় বিদ্রোহ করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। এরপর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সে হিসেবে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্বের সামনে কূটনীতিবিদ হিসেবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন মোয়াজ্জেম আলী। ওয়াশিংটন, ওয়ারশ, জেদ্দার পাশাপাশি নয়া দিল্লি মিশনেও তিনি কাজ করেছেন। মোয়াজ্জেম আলী বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ইউনেস্কোর কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস খসড়া প্রতিবেদন দিয়ে ভাষা আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে ভূমিকা রাখেন। পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ সালে অবসরে যান পেশাদার এই কূটনীতিক। অবসরের পরও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার তাঁকে কূটনৈতিক দায়িত্বে ফিরিয়ে এনে হাইকমিশনার করে দিল্লি পাঠায়। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি ওই দায়িত্ব পালন করে গত নভেম্বরে মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে আসেন। স্বনামখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর জন্ম ১৯৪৪ সালে সিলেটে। বড় ভাই এস এম আলী ছিলেন ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

লাশ দেখতে সিএমএইচে প্রধানমন্ত্রী : সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর লাশ দেখতে গতকাল দুপুর ২টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মোয়াজ্জেম আলীর স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের সান্ত্বনা দেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। সিএমএইচে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন শোকবার্তায় বলেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী একজন দক্ষ কূটনীতিক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম শোকবার্তায় বলেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর মৃত্যুতে জাতি একজন দক্ষ কূটনীতিককে হারাল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।