শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

টাকায় মেলে সব

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

টাকায় মেলে সব

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতিপরায়ণরা বন্দীসেবায় বেশ দক্ষ। দক্ষতা দেখাবার জন্য খরচাপাতি করতে হয়। জামিনে বের হওয়া বন্দীরা জানান, এমন প্রশ্ন আর পরামর্শও শোনা যায়, মাদক নেবে নাকি আরামে থাকবার জন্য রোগী সেজে হাসপাতালে ভর্তি হবে? বলে দাও আর টাকা ছাড়ো! কাজ হয়ে যাবে। সাতাশ দিন জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছেন কামাল হোসেন (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, ‘টাকার বিনিময়ে কারাগারের হসপিটালে ছিলাম। কিন্তু যারা সত্যিকারের অসুস্থ কয়েদি-হাজতি রয়েছেন তারা টাকা দিতে পারেন না বলে হসপিটালের সিটের সুবিধা পান না।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, কারাগারের হাসপাতালের সুযোগ সুবিধা পেতে এক মাসে প্রতি কয়েদির কাছ থেকে সাত হাজার টাকা নেওয়া হয়। যার মধ্যে দায়িত্বরত ডাক্তার ও কারাগারের অভ্যন্তরে দায়িত্বরত সুপারভাইজারসহ অন্যরা এ টাকার ভাগ পান।

লাকসাম পশ্চিমগাঁওয়ের জামাল হোসেন জানান, মাদক মামলায় তিন মাস জেল খেটে বের হয়েছেন। কারাগারের ভিতর টাকা ছাড়লে সবই পাওয়া যায়। কারাগারের বাইরে যত শৃঙ্খলা, ভিতরে ততই বিশৃঙ্খলা। যাদের টাকা আছে তারা এখানে সব সুবিধা পায়। ময়মনসিংহ জেলা থেকে আবদুল হক এসেছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছেলেকে দেখতে। তিন ঘণ্টা পর তার সিরিয়াল এসেছে। তিনি বলেন, ‘১০ টাকার টিকিট কেটে অপেক্ষা করেছি তিন ঘণ্টা। আর তার বহু পরে এসে ১০০ টাকার বিনিময়ে চার-পাঁচ জন লোক তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন।’ বরুড়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পরিচিত এক কারারক্ষী আছেন। তাকে ১০০-১৫০ টাকা দিই। তিনি সব ম্যানেজ করে ১০ মিনিটেই দেখার সুযোগ করে দেন।’ বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আসা চৌদ্দগ্রামের কামাল হোসেন সরকার বলেন, ‘কারাগারের মূল ফটকের                 সামনে সাইনবোর্ডটির লেখা “রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ”- যেখানে টাকা ছাড়া কিছু হয় না, যেখানে কয়েদিরা টাকা দিয়ে মাদক সেবন করতে পারেন, যেখানে সুস্থরা কারা হাসপাতালে থাকতে পারেন। অসুস্থরা ধুঁকে ধুঁকে মরেন সেখানে এমন সাইনবোর্ড হাস্যকর!’ নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন কারারক্ষী জানান, ‘জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাসে একবার কারা পরিদর্শনে যান। যেদিন তিনি পরিদর্শনে আসেন তার আগের দিন কয়েদি-হাজতিদের কোনোরকম অভিযোগ-অনুযোগ ডিসিকে যেন না জানানো হয় তার জন্য হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কারা অভ্যন্তর পরিপাটি সাজানো হয় যেন কোনো অনিয়ম না দেখেন।’

টাকার বিনিময়ে সুস্থ হাজতিদের হাসপাতালে সেবা, মাদক সরবরাহ/ সেবন ও কয়েদিদের অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগম বলেন, ‘অসুস্থ হাজতিদের কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়, কোনো সুস্থ হাজতিকে নয়। সুস্থ হাজতি টাকার বিনিময়ে হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছেন এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থীদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের টোকেন ছাপানো হয়। দর্শনার্থীরা হাজতে থাকা স্বজনদের বিনা পয়সায় দেখতে পারেন। টাকার বিনিময়ে কয়েদিদের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেখানো হয় এটি মিথ্যা অভিযোগ।’ এ ছাড়া মাদক সরবরাহ ও সেবন, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগগুলো জেলা প্রশাসকের কাছে প্রকাশে কয়েদি ও হাজতিদের বাধা প্রদানের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর