শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানিতে ভাটা

লোকসানে গলদা চাষে অনাগ্রহ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

২০১৬-১৭ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন কম। এই সময়ের মধ্যে গলদা চিংড়ির উৎপাদন ও রপ্তানি কমেছে সবচেয়ে বেশি। খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয় ১ হাজার ৩৩১ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১৩৯ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময় গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন। যা আগের অর্থবছর থেকে ২০৮ মেট্রিক টন কম। জানা যায়, দেশের উপকূলীয় জেলার প্রায় দুই লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর চিংড়ি চাষ হয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ১০ লাখ মানুষ। পর পর কয়েক বছর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না পাওয়া ও গলদা চাষে লোকসানের কারণে চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে অনেক চাষি এ বছর গলদার বদলে অন্য মাছ চাষ করেছেন। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের  (বিএফএফইএ) মতে, চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। একদিকে চাষিদের অনাগ্রহে উৎপাদন কমে  গেছে। তাছাড়া ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি বাজার দখল করায় রপ্তানি কমছে। জানা যায়, চিংড়ির অভাবে কোম্পানিগুলো তাদের সক্ষমতার ১৫ থেকে ২০ ভাগের বেশি ব্যবহার করতে পারে না। ফলে বৈদ্যুতিক ব্যয়, ব্যাংক সুদ ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

এদিকে চিংড়ি রপ্তানিকারকদের মতে, বিদেশে চিংড়ির বাজার দখল করে আছে ভেনামি জাতের হাইব্রিড চিংড়ি। ততটা সুস্বাদু না হলেও পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সস্তায় বিক্রির কারণে বাজার দখল করেছে।

বিএফএফইএ পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে বাগদা ৩৫০-৪৫০ কেজি ও গলদা ৪৫০-৫০০ কেজি উৎপাদন হয়। সেখানে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে প্রতি হেক্টর জমিতে ভেনামি চিংড়ি ১ হাজার ১০০-১ হাজার ২০০ কেজি উৎপাদন করছে।

চিংড়ির বাজার ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, চিংড়ির উৎপাদন বাড়ার ক্ষেত্রে বাধা ঘেরের অবকাঠামো সংকট। অনেক ঘেরেই পর্যাপ্ত পানি থাকে না। চিংড়ি পোনার গুণগত মানও একটা বড় সমস্যা। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হওয়ায় বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে চিংড়ি রপ্তানি কমছে।

তবে সরকারি পর্যায়ে ঘেরে পানি সরবরাহে খুলনা অঞ্চলে ৫০০ হেক্টর খাল খনন, ক্লাস্টারভিত্তিক চাষিদের আধুনিক চাষ পদ্ধতি প্রশিক্ষণ ও পোনার হ্যাচারি উন্নয়নে কাজ করেছ মৎস্য অধিদফতর। 

মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (চিংড়ি) মো. শামীম হায়দার জানান, ভেনামি চিংড়ি চাষে ভাইরাসের ঝুঁকি থাকে। এ কারণে ভেনামি চিংড়ি চাষ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে। সরকারি পর্যায়ে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ভেনামি চিংড়ির চাষ শুরু হয়েছে। এতে সাফল্য মিললে চাষি পর্যায়ে ভেনামি চিংড়ি চাষে অনুমতি দেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর