শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শিশুদের খাবার চিকিৎসার টাকা লুটপাট

রাজশাহী শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

চার মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনের সংসার তানজিলার খাতুনের। ছোট মেয়ে রুমি খাতুনকে পড়ালেখার জন্য রাজশাহী নগরীর উপশহরে অবস্থিত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখেছিলেন বছর খানেক আগে। তবে মাস সাতেক যেতেই রুমি পেটের ব্যথায় ভুগতে থাকেন। এরপর সেই শিশুর কোনো চিকিৎসা না করেই তার মা তানজিলাকে খবর দেওয়া হয় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জাকিরুল্লাহ ও হাবিবুল্লাহ। তার মায়ের নাম সুমি বেগম। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামজীবনপুর কাঁচারিপাড়া এলাকায়। এই এলাকার হারুনার রশিদের ছেলে জাকিরুল্লাহ ও হাবিবুল্লাহকে মূলত পড়ালেখার জন্য রেখে যাওয়া হয়েছিল শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। কিন্তু এই দুই শিশুর পোশাক কেনার জন্য গত বছর ২ হাজার টাকা দাবি করা হয় পরিবার থেকে। শেষে ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে পোশাক নিজেরাই কিনে দেন হাবিবুল্লাহ ও জাকিরুল্লাহর পরিবার। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহীর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে শিশুদের থাকা, খাওয়া, পড়ালেখা থেকে শুরু করে সার্বিক সুবিধার জন্য প্রতি তিন মাস অন্তর প্রায় ৩৬ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয় সরকার থেকে। এই বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা হয়ে যাচ্ছে লুটপাট। এতে করে শিশুদের সঠিক পরিচর্যা যেমন হয় না, তেমনি শিশুদের খাবারের মানও তেমন ভালো দেওয়া হয় না। এমনকি পোশাক কিনতেও অভিভাবকদের কাছ থেকে নগদ টাকা বা পোশাক নেওয়া হয়।  গত ১২ জানুয়ারি এই কেন্দ্রে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর উপশহরের দুই নম্বর সেক্টরে অবস্থিত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে উপস্থিত বালক শিশু ছিল মাত্র ৪৩ জন। অথচ কেন্দ্রটির খাতায় সেদিন উপস্থিত শিশুর সংখ্যা দেখানো হয় ৭০ জন। বালিকা শিশুদের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মেয়ে শিশুর সংখ্যা ছিল ৮৩ জন। কেন্দ্রের দায়িত্বরত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এখানে শিশুদের কোনো নিরাপত্তা নাই। যে যার মতো বাইরে যায়, আবার চলে আসে। ফলে প্রতিদিন কতজন শিশু এখানে আছে বা বাড়িতে গেছে অথবা ছুটিতে তার সঠিক তথ্য এখানে থাকে না। কিন্তু হাজিরা খাতায় ইচ্ছেমতো উপস্থিত দেখিয়ে শিশুদের খাবারের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আবার ঠিকমতো চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হয় না। এমনকি শিশুদের মানসম্মত কোনো স্কুলেও ভর্তি করা হয় না।

সূত্র মতে, এই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হলেন রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির উপ-প্রকল্প পরিচালক সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু সেখানে আমি নানা অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করেছি। এমনকি শিশুদের জন্য ওষুধ কেনার নামেও ব্যাপক অনিয়ম দেখা গেছে। আমি এসব বিষয়ে ধরেছি। রেজুলেশনেও উল্লেখ করেছি। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে দুটি সভার পরে আর সভা করা হয়নি।’

প্রতিষ্ঠানটির উপ-প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম প্রধান বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে কিছু সমস্যা থাকবেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর