মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

জালালাবাদ গ্যাসে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পেট্রোবাংলার অধীন জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন সিস্টেম অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। এক যুগের বেশি সময় ধরে মাস্টাররোলে চাকরিরতদের স্থায়ী না করে বাইরে থেকে লোক নেওয়ায় দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ নিয়ে উচ্চ আদালতেও একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে  থাকা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতাদের যোগসাজশে এই নিয়োগের নামে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।

জানা গেছে, জালালাবাদ গ্যাসে বিভিন্ন স্থায়ী পদে ১০৮ জন লোক নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি গত বছরের ১৮ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়। গেল ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ পর্যন্ত এসব পদে আবেদন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এসব পদের বিপরীতে আবেদনকারীদের এখনো পর্যন্ত নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান কিংবা পরীক্ষা কবে হবে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এরই মধ্যে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে (এলপিআর) যাওয়ার আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে রান সিকিউরিটি নামক একটি কোম্পানির মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, হিসাব সহকারী, জুনিয়র ক্লার্ক, গাড়িচালক, অফিস সহায়ক, মালি, বাবুর্চিসহ বিভিন্ন পদে প্রায় ১১০ জন লোক নিয়োগ দেন বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল হক।

অভিযোগ উঠেছে, এক বছরের চুক্তিভিত্তিক এই চাকরির জন্য একেকটি পদের বিপরীতে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে এলপিআরে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল হকের সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাসের আরও কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতা জড়িত রয়েছেন। এ নিয়োগ নিয়ে মাস্টাররোলে আগে থেকে কাজ করা কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জালালাবাদ গ্যাসে বর্তমানে ৭৬ জন কর্মচারী ৮ থেকে ১৪ বছর সময় ধরে মাস্টাররোলে কাজ করছেন। বছরের পর বছর গেলেও এদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। এর মধ্যে ৪৩ জন চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ হাই কোর্টে দুটি মামলা করেন। একটি মামলায় ২৬ জন, অপর মামলায় ১৭ জন পক্ষভুক্ত হন।

একটি মামলার বাদী জুনিয়র ক্লার্ক তুষার মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুনানি শেষে হাই কোর্ট আমাদের চাকরি স্থায়ী করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ছয় মাস পর আপিল করে আগের রায় স্থগিত করায় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। পরে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় আছে।’ তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের চাকরি স্থায়ী না করে কৌশলে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দিচ্ছে, আবার স্থায়ী লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে।’

জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে জালালাবাদ গ্যাসের বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল হক পাটোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রান সিকিউরিটির সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের চুক্তি আগেই ছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত বছরের শেষের দিকে চুক্তিটি নবায়ন হয়েছে। নতুন করে কোনো চুক্তি হয়নি। সময় স্বল্পতার কারণে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। তবে এই চুক্তি আর নবায়ন হবে না।’

এহসানুল হক পাটোয়ারী চুক্তি নবায়নের কথা বললেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবায়নের নামে রান সিকিউরিটির কাছ থেকে নতুন করে লোক নিয়োগ নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পদের সংখ্যাও। এ ছাড়া রান সিকিউরিটিকেই কাজ দিতে তিনি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর