বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

হতাশাগ্রস্তদের পাশে ‘কান পেতে রই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

হতাশা, অবসাদ, একাকিত্ব ও মানসিক চাপে অনেক সময় জীবনকে অভিশপ্ত মনে হয়। নিজের জীবনকেও মনে হয় মূল্যহীন। ফলে  কোনো কিছু না ভেবেই কেউ কেউ আত্মহননের পথ পর্যন্ত বেছে নেন। অথচ শুধু সঠিক কাউন্সেলিং ও দিকনির্দেশনা হতাশাগ্রস্ত মানুষটিকে দিতে পারে নতুন জীবন। শুধু জীবন রক্ষাই নয়, দিতে পারে নতুন করে জীবন শুরু করার প্রেরণা। বিগত সাত বছর ধরে হতাশাগ্রস্ত ও মানসিক অশান্তিতে থাকা মানুষদের টেলিফোনে বিনামূল্যে কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে আসছে ‘কান পেতে রই’ হেল্পলাইন।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কান পেতে রই : মানসিক স্বাস্থ্যে আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেল্পলাইনের ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। ‘কান পেতে রই’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা ছিলেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল এবং শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘কান পেতে রই’ সাত বছরে ১৯ হাজারের বেশি মানুষকে মানসিক সমর্থন দিয়েছে। যারা ফোন করেছেন তাদের ২০ ভাগের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ফোনে মানুষগুলোর কষ্টের কথা শুনে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই কাউন্সেলিং অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।

প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা পর্যন্ত তাদের হেল্পলাইন খোলা থাকে। হেল্পলাইন নম্বরগুলো হলো : ০১৭৭৯৫৫৪৩৯১-২, ০১৬৮৮৭০৯৯৬৫-৬, ০১৯৮৫২৭৫২৮৬, ০১৮৫২০৩৫৬৩৪ এবং ০১৫১৭৯৬৯১৫০।

সুলতানা কামাল বলেন, শুধু কারও কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার মাধ্যমেই সম্পর্কের জায়গাটি উন্নত করা সম্ভব। ‘কান পেতে রই’ এ কাজটি করছে। মানুষ যে কথাগুলো কাউকে বলতে না পেরে ভিতরে ভিতরে ক্ষত-বিক্ষত হয়, তাদের সেই কথাগুলো শুনে তাকে হালকা হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা অনেক বড় মানসিক সমর্থন।

ড. জাফর ইকবাল বলেন, দেশের অসংখ্য মানুষ নানা রকম মানসিক চাপে ভুগছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বহুমাত্রিক। ‘কান পেতে রই’ মানসিক সহায়তার যে সেবাটি দিচ্ছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে মানসিক সমর্থন দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হলেও এখানে যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে, তারাও দেশের মূল্যবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে।

অনুষ্ঠানে ‘কান পেতে রই’-এর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েশিম ইকবাল বলেন, ‘কান পেতে রই’ বাংলাদেশে প্রথম মানসিক সহায়তা ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেল্পলাইন। এখানে যে কেউ ফোন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকের কাছ থেকে বিনামূল্যে জরুরি মানসিক সেবা পেতে পারেন। হেল্পলাইনটির মূল উদ্দেশ্য মানুষের হতাশা, একাকিত্ব, মানসিক চাপ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা গোপনীয়তা ও সহমর্মিতার সঙ্গে সম্পূর্ণ খোলা মনে মানুষের কষ্টের কথা শোনেন। তাদের কাউন্সেলিং দেন। বিশ্বের ৪২টি দেশে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা আত্মহত্যা রোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রধান রুবিনা জাহান জানান, আন্তর্জাতিক মডেল ‘বিফ্রেন্ডিং’ অনুসরণ করে হতাশাগ্রস্তদের সেবা দিচ্ছে ‘কান পেতে রই’।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর