শিরোনাম
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন কমিটি পুরনো হতাশা

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

আগের কমিটিতে দুই মেরুতে ছিলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ফলে ৮ ডিসেম্বরের সম্মেলনে বাদ যান দুজনই। কিন্তু নতুন কমিটিতেও হতাশা কাটছে না। সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারীরা এখনো বিভক্ত। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের দুজনের অনুসারীদের কারা স্থান পাচ্ছেন এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা।

এ ছাড়া দীর্ঘ সময়ের নগরীর লক্ষ্মীপুরের জেলা কার্যালয় বদলে ফেলা হয়েছে। নতুন সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা নগরীর অলোকার মোড়ে গড়েছেন তার কার্যালয়। এখন সেখানেই ফারুক চৌধুরী ও দারার অনুসারীরা আড্ডা দেন। যদিও কার্যালয়টি সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার ব্যক্তিগত। সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘এখনো কমিটি চূড়ান্ত হয়নি। দলে নিবেদিত প্রাণ নেতাদেরই রাখা হবে। সভাপতির সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’ দলীয় সূত্র মতে, গত ৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের পর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় করা নগরীর লক্ষ্মীপুরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের আগের কার্যালয়টি বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব পাওয়া নেতারা বসছেন নগরীর অলোকার মোড় এলাকায় অবস্থিত বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার ব্যক্তিগত কার্যালয়টিতে। আর আগের কার্যালয়টিতে এখন শুধু সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং তার গ্রুপের নেতা-কর্মীরা বসছেন। তবে একসময় যে কার্যালয়টি ছিল নেতা-কর্মীদের পদচারণায় সরগরম, এখন সেটা অনেকটা নিস্তব্ধ। অন্যদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা যে কার্যালয়টি গড়ে তুলেছেন সেখানে তাদের অনুসারীরা ভিড় করতে শুরু করেছেন। সম্মেলনের  আগে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই ছিলেন আসাদ গ্রুপে। আর একটি অংশ ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর দিকে। এই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব গত কয়েক বছর ধরে এতটাই প্রকাশ্যে আসে যে, শেষের দিকে ফারুক-আসাদ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করতে শুরু করেন। পাশাপাশি দুই গ্রুপের পক্ষ থেকেই কেন্দ্রে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ পড়তে থাকে। গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত দুজনকেই বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়। এতে সভাপতি করা হয় সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারাকে। আর যুগ্ম-সম্পাদক করা হয় বর্তমান রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুকে।

দলীয় সূত্র মতে, এই কমিটি গঠনের পর একমাত্র রাজশাহী-৫ আসনের এমপি মুনসুর রহমান ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য চার এমপিরই নতুন কমিটির নেতাদের সঙ্গে সখ্য আছে। যদিও সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা আসাদ গ্রুপের হলেও তিনি হঠাৎ করে সভাপতি হওয়ায় আসাদ সমর্থকরা তাকে বিশ্বাস করছেন না। আসাদকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে সরাতে পেরে অনেকটাই ফুরফুরে অবস্থানে আছেন সাবেক সভাপতি রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তানোর-গোদাগাড়ী থেকে ফারুক চৌধুরী বিরোধী যেসব নেতা আসাদের গ্রুপে ভিড়েছিলেন, আসাদ পদ না পাওয়ায় তারা এখন অনেকটা কোণঠাসা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত সাবেক এমপি মেরাজ মোল্লার সঙ্গে একই আসনের বর্তমান এমপি আয়েনেরও দূরত্ব ছিল। এ কারণে মেরাজ মোল্লা বাধ্য হয়ে গত কয়েক বছর ধরে আসাদ গ্রুপে যোগ দিলেও এখন পদ পেয়ে নিজেই নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এমপি আয়েন জেলার যুগ্ম-সম্পাদক হওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকরাও আছেন চাঙ্গা। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এমপি আয়েন ছিলেন শক্ত প্রার্থী। কিন্তু তিনি ওই পদটি না পাওয়ায় এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী মেরাজ মোল্লা সভাপতি হওয়ায় অনেকটাই মনোক্ষুণ্ন হন এমপি আয়েন উদ্দিন। কমিটি গঠনের দিন থেকে বেশ কয়েকদিন আয়েনের কর্মী-সমর্থকরা ফেসবুকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা মন্তব্যও করেন।

রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হকের সঙ্গে আসাদের ভালো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জেলার সব নেতা-কর্মীদের মুখে-মুখেই ছিল। কিন্তু আসাদ শেষ পর্যন্ত গত সম্মেলনে কোনো পদ না পাওয়ায় এমপি এনামুল বিরোধী গ্রুপটি এখন অনেকটা চাঙ্গা। তারা নতুন নেতাদের কাছে ছুটছেন বেশ জোরেশোরে। রাজশাহী-৫ আসনের বর্তমান এমপি মুনসুর রহমানের সঙ্গে আসাদের আছে বেশ সখ্য। আবার মুনসুরের প্রতিদ্বন্দ্বী একই আসনের সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে আছে বিরোধ। ফলে গত সম্মেলনের পর দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে কয়েকটি সংঘর্ষ-পাল্টা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। জেলার সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে অনেকটা চাঙ্গা হয়েছে সাবেক এমপি দারার কর্মী-সমর্থকরা।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমার কোনো গ্রুপ নাই। আমার কোনো লোকও নাই। তবে বিগত সময় যারা জেলা কমিটিতে ছিলেন, তারা সবাই দলের নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু বর্তমান কমিটি গঠনের পর নতুন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা হতাশ হয়েছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু এসব নেতা-কর্মী যদি নতুন কমিটি দূরে রাখতে চায়, তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমার কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ আমার কোনো নিজস্ব লোক নাই। আমি যাদের নিয়ে চলেছি, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক।’

তবে দলের মধ্যে যেটুকুর বিরোধ আছে, তা নিরসন করে আগামীতে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার চেষ্টা থাকবে বলে দাবি করেছেন জেলার সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে পদ পেতে লড়াই থাকবেই। তাই বলে কাউকে রেখে কাউকে নিয়ে চলাটা আমাদের ঠিক হবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর