শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বাঘ-সিংহের ঐতিহ্য আলিপুর চিড়িয়াখানা

কলকাতার কথা - ৩

মোস্তফা কাজল, কলকাতা থেকে ফিরে

বাঘ-সিংহের ঐতিহ্য আলিপুর চিড়িয়াখানা

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী আলিপুর চিড়িয়াখানায় দুই সন্তান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাঘ-সিংহের ঐতিহ্য নিয়ে ২২০ বছরের ইতিহাসকে জীবন্ত করে রেখেছে কলকাতার আলিপুর পশুশালা বা চিড়িয়াখানা। এখানে ৬ শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৭ হাজার বন্য পশু ও পাখি রয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার আয়তন ১৪৫ একর। এ চিড়িয়াখানায় সব প্রাণীকে প্রথম দেখায় মনে হবে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠছে। ১৮০০ সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল আর্থার ওয়েলেসলি উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুরে নিজ বাসভবনে একটি পশু  উদ্যান গড়ে তোলেন। এর দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটনকে। ১৮১০ সালে বিখ্যাত শিকারি স্যার স্টামফোর্ড র‌্যাফেল এ পশু উদ্যানে এসে একটি বন্যপ্রাণী টাপি শিকার করেন। এ চিড়িয়াখানা বা পশু উদ্যান সে সময় থেকেই জনপ্রিয়তা পায়। পরে লন্ডন চিড়িয়াখানাও এখান থেকে বেশকিছু পদ্ধতির অনুকরণ করে। এরপর ১৮৭৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রিন্স অব ওয়েলস সপ্তম এডওয়ার্ড কলকাতার আলিপুরে এ চিড়িয়াখানার উদ্বোধন করেন। এ চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অজয় সান্যাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে বিশ্বের প্রায় সব প্রজাতির প্রাণীর বংশধর রয়েছে। ছুটির দিনে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে।’ মূলত ১৯৭০ সালে বাঘ ও সিংহের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে ‘টাইগন’ নামে এক নতুন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর জন্ম দেওয়া হয়। এ দুই প্রাণী হলো রুদ্রাণী ও রঞ্জিনী। ভারতীয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও আফ্রিকান লায়নের মধ্যে এ প্রজনন ঘটানো হয়। আফ্রিকান সিংহের সঙ্গে মিলিত হয়ে রুদ্রাণী পরে আরও সাতটি লিটিগনের জন্ম দেয়। এ সংকর প্রজাতির প্রাণীগুলো প্রজননে অক্ষম ছিল এবং জিনগত কারণে এরা বেশিদিন বাঁচেনি।

তবে এ নতুন লিটিগনগুলোর মধ্যে কিউবাকানান নামে একটি লিটিগন পূর্ণ বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিল। দাবি করা হয়, এটাই পৃথিবীর বৃহত্তম বিগ ক্যাট। পরবর্তীকালে আইন করে প্রাণী সংকরায়ণ নিষিদ্ধ হলে ১৯৮৫ সালে কলকাতা চিড়িয়াখানা সংকরায়ণ প্রথা বন্ধ করে। ২৫ বছর বযসে, ১৯৯৫ সালে পৃথিবীর শেষ লিটিগন রঞ্জিনী মারা গেলে এ সংকর প্রজাতির পশু পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়।

২০০৩ সালে আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রবেশমূল্য বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়। এ চিড়িয়াখানার সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণীটি হলো অ্যালডাব্রা দৈত্যাকার কচ্ছপ ‘অদ্বৈত’। রবার্ট ক্লাইভকে এটি উপহার দিয়েছিলেন সেসেলসের ব্রিটিশ নাবিকরা। অদ্বৈত কচ্ছপ ১৮৭৫ সালে আলিপুর চিড়িয়াখানায় আসে। ২০০৬ সালে কচ্ছপটির মৃত্যু হয়। সে সময় এ প্রাণীটির বয়স ছিল ২৫০ বছরের বেশি। এটিই ছিল সে সময়কার বিশ্বের প্রবীণতম প্রাণী। চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, পাখি শেডের উল্টো দিকে কয়েকটি অ্যাকোরিয়াম রয়েছে। আছে ১০ জোড়া বাঘ, আট জোড়া সিংহ। আছে উটের শেড, হনুমান, মায়াহরিণ, কুমির, গরিলা, হায়েনা, গন্ডার, জেব্রা, লাল ক্যাঙ্গারু ও হাতি। সারা বিশ্বের নানা জাতের নানা বর্ণের বিভিন্ন নান্দনিক সামুদ্রিক মাছ এখানে রয়েছে। দেখলে দুই চোখ জুড়িয়ে যায়। পাশাপাশি পাখির কিচিরমিচির শব্দ আগত সবাইকে নির্মল আনন্দ দেবে। চিড়িয়াখানার মাঝখানে অ্যাটলাসের একটি মূর্তি রাখা আছে। সেই মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে একটা সেলফি তুলতে আগত কেউ ভুল করেন না। আলিপুর চিড়িয়াখানা শুধু পশু ও পাখির জন্য নয়; এটি একটি সুন্দর বাগানের জন্যও বিখ্যাত। পুরো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। হাঁটার পথে সুন্দর সুন্দর ফুলের সমাহার দেখা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর