রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

গোয়েন্দা নজরদারিতে মানব পাচারকারীরা

সারা দেশে ৪৩৩, সিলেট বিভাগে ৩৭

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বিদেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর সিলেটের তরুণরা। দালালদের খপ্পরে পড়ে তারা অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সাগরে ট্রলার ডুবে বা পাহাড়-জঙ্গলে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। একেকটি মৃত্যুর সঙ্গে নিভে যাচ্ছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। শুধু সিলেটের নয়, গত কয়েক বছর থেকে সারা দেশের তরুণদের মধ্যে বেড়েছে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা। মানব পাচারকারীদের অপকর্মে বাংলাদেশকে এ সংক্রান্ত তালিকায় ‘টায়ার-টু’ তথা বিশেষ নজরদারির তালিকায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এমতাবস্থায় মানব পাচারকারীদের খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নেমেছে তদন্তে। ইতিমধ্যে  গোয়েন্দাদের তালিকায় উঠে এসেছে সিলেট বিভাগের ৩৭ মানব পাচারকারীর নাম। এই তালিকায় সারা দেশের আরও ৪৩৩ জন মানব পাচারকারীর নাম রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার ওই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকা ধরে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে। গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় সিলেট জেলার ৮ মানব পাচারকারীর নাম আছে। তারা হলেন- সিলেটের গোলাপগঞ্জের এনাম আহমেদ (ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে প্রাণহানির ঘটনায় বর্তমানে জেলে রয়েছেন)। আম্বরখানার একটি ট্রাভেলসের মালিক নজির আহমেদ, মাহমুদুর রহমান চৌধুরী শিপু, জিন্দাবাজারের ট্রাভেলস ব্যবসায়ী হাসান আহমদ, দেলোয়ার হোসেন খান ও হাসান আবদুল গণি, বিশ্বনাথের কাকলিপাড়ার রফিকুল ইসলাম ও গোলাপগঞ্জের শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের জায়েদ আহমদ। এদের মধ্যে হাসান আবদুল গণি কানাডায় পালিয়ে গিয়ে সেখানে স্থায়ী হয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তালিকায় থাকা সবাই ট্রাভেলস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মানব পাচারকারীর তালিকায় রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার

৯ জনের নাম। এরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদরের আহমদ রওশনের ছেলে কোরবান আলী ও মোহনপুরের আবদুল মনাফের ছেলে আফাজ উদ্দিন, ছাতকের কালারুকার শামীম মিয়া, রামপাশার পারভেজ মিয়া, বাউশার রোকন মিয়া, শমছু মিয়া, জানিগাঁওয়ের শহীদুল হক, কান্দিগাঁওয়ের ফয়জুল ইসলাম ও করিমপুরের এনামুল হক। তালিকায় সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানব পাচারকারী রয়েছেন হবিগঞ্জে। এই জেলার ২০ জনের নাম রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। তারা হলেন- হবিগঞ্জ সদরের প্রবাসী সীতেশ চন্দ্র দাস, পাইকপাড়ার ফজলু মিয়া, শাহবাজ, নিতাইচরের জহুর আলী, মাহমুদাবাদের হাসান মিয়া, আজমিরীগঞ্জের জাহের আনসারী, সৌদি প্রবাসী মো. আবদুল্লাহ, পাথারিয়ার কোহিনুর আলম, নোয়াগাঁওয়ের মোতাহের মিয়া, নবীগঞ্জের লুৎফুর রহমান মাখন, আবদুল কাইয়ুম, দিলবাহার আহমেদ, কায়স্থগ্রামের মুহিদ মিয়া, মাহমুদপুরের তনু মিয়া, কালাম মিয়া, বৈঠাখালের ফুল মিয়া, দুর্গাপুরের আঙ্গুর মিয়া, অলিউর রহমান ও ভানুদেবের জাবেদ আলী। এ ব্যাপারে আটাব সিলেটের সাবেক সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মূলত অবৈধ ও দুর্নীতিবাজ ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রশাসনকে বারবার তাগিদ দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে মানব পাচার থামছে না। প্রশাসন কঠোর হলে মানব পাচার বন্ধ করা সম্ভব। এদিকে মানব পাচার ঠেকাতে এ সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সিলেটসহ দেশের সাতটি বিভাগে পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর