রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
স্মরণসভায় অভিমত

সাংবাদিকতায় আবদুস সালামের মতো সাহস ও আদর্শনিষ্ঠা চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুস সালামের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তারা দেশের সাংবাদিকতায় তাঁর মতো সাহসী, সত্য ও আদর্শনিষ্ঠ মানুষ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাহলেই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যে অন্ধকার রয়েছে তা দূরীভূত হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ‘অবজারভার’ সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন লোটন ইকরাম। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, নিউনেশন সম্পাদক এ এম মুফাজ্জল, নিউজ টুডের সাবেক সম্পদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাবি সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান, অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও কামাল উদ্দীন সবুজ এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি, আবদুস সালামের মেয়ে রেহানা সালাম প্রমুখ। ড. আনিসুজ্জামান তাঁর ভাষণে বলেন, ১৯৫২ সালে যে সম্পাদকীয় প্রকাশের জন্য পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ হয়ে যায় তাতে তেমন কিছুই ছিল না। তাতে কথিত হযরত ওসমানের একটি দুর্নীতির উল্লেখ ছিল। সরকার বলল, মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগেছে। এ অজুহাতে কাগজ বন্ধ করে দেওয়া হলো। কিন্তু উনি বিচলিত হননি। এরপর পাকিস্তানে আইউব খানের সঙ্গে সম্পাদকদের যে সভা হলো সেখানে তিনি অকুতভয়ে কথা বলেছেন। বলা চলে, সেখানে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের যে ক্ষমতা তাকে তিনি পুরোপুরি আঘাত করেছেন। কিন্তু দুঃখ লাগে এই ভেবে, স্বাধীন বাংলাদেশেও সাংবাদিক আবদুস সালামকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল সম্পাদকীয় লেখার জন্য, এটি নিশ্চয়ই আমাদের ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, সরকারি চাকরি ছেড়ে আবদুস সালাম যখন সাংবাদিকতায় আসেন তখন সাংবাদিকতা সম্পর্কে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু নিজের মেধা, সাহস ও সৃজনশীলতা দিয়ে তিনি সাংবাদিকতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

 তার কাছে সাংবাদিকতা ছিল পবিত্র দায়িত্বের মতো। তাকে তিনি কনিষ্ঠদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন। নিজের দায়িত্ব পালনে তিনি কখনো দ্বিধা করেননি। তিনি যেভাবে সাংবাদিকতা করেছেন, আশা করি তাকে আজকের সাংবাদিকতার আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তাহলেই তার প্রকৃত মূল্যায়ন করা হবে। সাখাওয়াত আলী খান বলেন, ‘সুপ্রিম টেস্ট’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লিখে আবদুস সালাম স্বাধীনতার পর রেভ্যুলেশনারি গভর্নমেন্ট থেকে কনস্টিটিউশনাল গভর্নমেন্টে যাওয়ার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, দলীয় বিভাজনের কারণে আজকে সাংবাদিকতায় যে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে, সাংবাদিকতা পেশা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা দূর করতে হবে।

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতায় যখন সত্যের মৃত্যু ঘটে, তখন আর সাংবাদিকতা থাকে না। দলের আনুগত্য করতে গিয়ে এখানে সত্য উপেক্ষিত। এটা কীভাবে দূর হবে জানি না। উপমহাদেশের স্বর্ণযুগের সাংবাদিকতায় আবদুস সালামের নাম জ্বলজ্বল করছে। আমরা যখন তার নামে স্বর্ণপদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন ভারত-পাকিস্তানের সাংবাদিকরা অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। প্রথম স্বর্ণপদক গ্রহণ করতে সানন্দে বাংলাদেশে এসেছিলেন কুলদীপ নায়ার।

এ এফ এম মুফাজ্জল বলেন, সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। আবদুল সালাম সাংবাদিকতার নামে কেরানি সৃষ্টি করতে চাননি। তিনি সাংবাদিকতা চর্চা শিখিয়েছিলেন। তিনি প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক হিসেবেও সে কাজটাই করতে চেয়েছেন। ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, আবদুস সালাম সাংবাদিকতায় যে অবদান রেখে গেছেন, তরুণ প্রজন্মের অনেকে তা জানে না। এ জন্য তার নাম ও কর্মকে স্মরণীয় রাখতে আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে এ হলটির নামকরণ করেছি ‘আবদুস সালাম হল’।

সর্বশেষ খবর