শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দীর্ঘমেয়াদি ‘শিক্ষাসফরে’ অনেক পরিবার

শিক্ষক সংকট

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত স্কুল-কলেজ না থাকা ও ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকটের কারণে সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অনেক পরিবারকে সুনামগঞ্জ ছেড়ে ‘দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাসফরে’ যেতে হচ্ছে সিলেটসহ অন্যত্র। বছর বছর এই প্রবণতা বাড়ছে। আর এই সুযোগ যেসব অভিভাবকের নেই, তারা প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা খরচ করছেন প্রাইভেট টিউটর ও কোচিং-এর পেছনে। দীর্ঘমেয়াদি এই ‘শিক্ষাসফরে’ অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। জানা যায়, ১ হাজার ৬০০ ছাত্রের সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৭ জনের পদ শূন্য। এ ছাড়া অতিরিক্ত ৬টি ক্লাসের বিপরীতে কোনো শিক্ষক নেই প্রতিষ্ঠানটিতে। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হয় এখানে। একই অবস্থা সরকারি এস সি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েরও। ১২০০ শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ২৮ জন। বাকিটা চলে জোড়াতালি দিয়ে। বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর পড়শোনার মান খুব একটা ভালো নেই। সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফয়েজুর রহমান বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে ছাত্রদের লেখাপড়ার মান কমাটাই স্বাভাবিক। তারপরও সীমিত জনবল দিয়ে আমরা ভালো করার চেষ্টা করছি। এদিকে, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়াশোনা করে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চ মাধ্যমিক, ¯œাতক পাস কোর্সের পাশাপাশি ১২টি বিষয়ে অনার্স পাড়ানো হয়। ৮০ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও অর্ধেক শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। করণিক পদগুলোতেও রয়েছে চরম জনবল সংকট। অভিভাবকরা জানান, প্রাথমিক পর্যায় থেকে সুনামগঞ্জের যেসব অভিভাবক তার সন্তানকে মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান- এখানকার বাস্তবতায় তাদের জন্য সেই সুযোগ সীমিত। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গৎবাঁধা নিয়মে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। এর বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কিন্ডারগার্টেনগুলোও পাঠদানের মানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে।

 

সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা দেওয়ান মোবাশ্বির রাজা চৌধুরী সুজন বলেন, আমার দুই সন্তানকে সিলেটের আনন্দ নিকেতন স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। শহরে মানসম্পন্ন স্কুল না থাকায় কেবল সন্তনের পড়াশোনার জন্য বাসাবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য রেখে পরিবার নিয়ে আমাকে সেখানে থাকতে হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হক জানান, আমি উকালতি করি সুনামগঞ্জে। কিন্তু সন্তানদের ভালো কলেজে পড়াশোনা করানোর জন্য আমাকে সিলেটে থাকতে হচ্ছে। জেলার একটি মাত্র বড় কলেজে শিক্ষক নাই। এসএসসি পাস করার পর ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে আগের ফলাফল ধরে রাখতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। কাজেই সন্তানের ভালো পড়াশোনার কথা বিবেচনা করে বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে সিলেটে থাকছি। তার মতো আরও অন্তত ২০ জন আইনজীবী সন্তনদের লেখাপড়া করাতে সিলেটে বাসা ভাড়া করে পরিবারসহ অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, কেবলমাত্র বহুতল একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়, এটা নিশ্চিত করতে হলে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। আমি এই বিষয়টি বারবার নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে নিয়ে এসেছি। একদিকে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে অপরদিকে  শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এই অবস্থায় সুনামগঞ্জে আরও ভালো মানের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর