রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলর প্রার্থী নেই

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া পাঁচ দলের পক্ষ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করলেও সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে কোনো প্রার্থী নেই। সেই পাঁচটি রাজনৈতিক দল হচ্ছেÑ জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। এসব দলের মেয়র প্রার্থী থাকলেও নেই নগরীর ১৪টি সংরক্ষিত ও ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কোনো প্রার্থী। শুধু মেয়র পদে নির্বাচন করা নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই পাঁচ রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে  অনেকেই বলছেন, এ দলগুলোর কোনো ধরনের সাংগঠনিক তৎপরতা ও কমিটি নেই বললেই চলে। ফলে তারা কীভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী বেছে নেবে? সাংগঠনিক ভিত্তি নেই, যোগ্য নেতা নেই, দলের মধ্যে সমন্বয় নেই, নামেই দল আছে, বাস্তবে নেই। এ ছাড়া এসব দলের আর্থিক সংকটসহ নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে আলোচনায়।

দলীয় ও নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চসিকের নির্বাচনে এবার মেয়র পদে নয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন দুই হেভিওয়েট আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। এ দুই দল কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে। আর যে পাঁচটি দল কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে পারেনি সে দলগুলোর মেয়র প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নগর জাপার সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব এম এ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ মুরাদ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খোকন চৌধুরী ও তানজির আবেদীন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ওয়াহেদ মুরাদ বলেন, মেয়র পদ ছাড়াও কাউন্সিলর পদে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুর রহিম এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডে রাশেদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ৪১ নম্বর ওয়ার্ড ও থানায় সাংগঠনিক কমিটি আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে উপযুক্ত প্রার্থীও রয়েছেন। তবে রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়া হয়নি।

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, নগর জাপার সাংগঠনিক তৎপরতা শক্তিশালী। বিভিন্ন ওয়ার্ডে যোগ্য নেতাও রয়েছেন। এখানে একটি চক্র পদ হারিয়ে এবং রাজনীতির মাঠে কাজ না করে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। কেউ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী নয়। তবু দুটি ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী দিয়েছি। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আর ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে পারলে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হবে।

ইসলামী আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রায় প্রতিটি আসনেই জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে যায়। এখানে আমরা বিজয়ী হওয়ার জন্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডেই কমিটি আছে, যোগ্য নেতাও আছেন। কিন্তু কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিইনি। কারণ এখানে মারামারিসহ নানা সমস্যা হবে। জোর করে কেন্দ্র দখল করবে। কেন শুধু শুধু প্রার্থী দেব!’

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থী এম এ মতিন বলেন, ‘বর্তমান সময়ের নির্বাচনগুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং নির্বাচনের নামে তামাশা হচ্ছে। মেয়র পদে নির্বাচন পরীক্ষামূলকভাবে নিয়েছি। তাই কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিইনি।’

নগর জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, নগর কমিটিতে রয়েছে ব্যাপক কোন্দল। মেয়র, এমপি যে কোনো নির্বাচন এলেই এখানে প্রার্থী হতে চান জনৈক নেতা। তিনি বলেন, ‘চসিকের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে কোনো প্রার্থী নেই। কেন নেই? নেতারা এসব দেখেন না? তারা শুধুই নিজের আখের গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। এখানে জাপার নেই ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কোনো কমিটি। যোগ্য নেতা নেই। কীভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী দেবে?’

প্রসঙ্গত, এবারের চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ তারিখ ১ মার্চ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মার্চ, প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ৯ মার্চ। নির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর