রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

এসিআর জালিয়াতির সেই ৪৮ কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রস্তাব

কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতর

মাহবুব মমতাজী

বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) জালিয়াতিতে অভিযুক্ত সেই ৪৮ কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রস্তাব আবারও পাঠিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। এর আগে গত বছরের ২৪ জুলাই এসিআর জালিয়াতি, সব ফিডার পদধারীদের সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা না থাকায় এবং নানা অনিয়মের কারণে একই প্রস্তাব শ্রম মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। অথচ পিএসসি ফেরত পাঠানো প্রস্তাবের সঙ্গে এক চিঠির ১ ও ৩ নম্বর নির্দেশনায় সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা তৈরি করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সিল ও স্বাক্ষরে প্রত্যয়ন করতে বলা হয়। কিন্তু সেসব নির্দেশনা না মেনে আগের তালিকাই পদোন্নতির জন্য গত ৯ জানুয়ারি পুনরায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় এ প্রতিবেদককে জানান, নতুন করে এসিআর তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা পুনরায় কোনো প্রস্তাব দেইনি। আগেরটাই রেখেছি। শুধু পিএসসির চিঠির জবাব দিয়েছি। এসিআরে কোনো ধরনের কাটাকাটি, ঘষামাজা, ওভাররাইটিং ছিল না। কারণ তার এক কপি মন্ত্রণালয়ে আছে। সেটি পরিচ্ছন্ন। কিন্তু পিএসসিতে পাঠানো এসিআরে ঘষামাজা কোনো দুষ্টচক্র করেছে বলে আমাদের সন্দেহ।  পদোন্নতির এই প্রস্তাব ফের পাঠানোয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পিএসসির সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শককে শোকজ করেছে। একই সঙ্গে কেন সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা করা হবে না তা জানতে চেয়ে ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ জুন সরকারি বিধিবিধানের (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি, বার্ষিক গোপনীয় অনুশাসন নীতিমালার) কোনোরূপ তোয়াক্কা না করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের দ্বিতীয় শ্রেণির ৪৮ জন শ্রম পরিদর্শককে প্রথম শ্রেণির সহকারী মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতির জন্য পিএসসিতে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু পদোন্নতির প্রস্তাবে এসিআর জালিয়াতি, সব ফিডার পদধারীদের সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা না থাকাসহ নানা অনিয়মের কারণে একই বছরের ২৪ জুলাই শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠায় পিএসসি। একই সঙ্গে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র এবং এসিআর জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ত্রুটিযুক্ত এসিআরগুলো সংশোধন করে পিএসসিকে অবহিত করার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে ৪৮ জনের বিষয়ে পৃথক নির্দেশনায় ঘষামাজামুক্ত এসিআর প্রয়োজন বলে জানানো হয়।

এর পরই গত বছরের ২৯ জুলাই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পিএসসির নির্দেশনা না মেনে তড়িঘড়ি করে বিধি বহির্ভূতভাবে পুনরায় পদোন্নতির পেছনে বিশাল অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। 

জানা গেছে, পিএসসি দেওয়া চিঠির ১ এবং ৩ নম্বর নির্দেশনায় জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ-সংক্রান্ত সরকারের প্রকাশিত সব বিধিবিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ফিডার পদধারী সব শ্রম পরিদর্শকদের সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রণয়ন করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সিল ও স্বাক্ষর করে প্রত্যয়ন করতে বলা হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা না মেনে আগের জ্যেষ্ঠতা তালিকাই পদোন্নতির জন্য পাঠানো হয়েছে।   

এদিকে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে বাদ পড়ায় ৫৭ জন শ্রম পরিদর্শক প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। তাদেরকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর