বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ বাড়ছে সীতাকুণ্ডে

হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের পাশাপাশি বাড়ছে কর্মসংস্থানও

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

বিনিয়োগ বাড়ছে সীতাকুণ্ডে

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অন্যতম শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ড একসময় জাহাজভাঙা এলাকা হিসেবেই খ্যাত ছিল। কিন্তু গত এক দশকে সীতাকুণ্ডে স্থাপিত হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপগুলোর অনেক প্রতিষ্ঠান; যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের পাশাপাশি বাড়ছে কর্মসংস্থানের পরিধিও। বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে সেখানে। আগামীতে এ এলাকায় ব্যবসার পরিধি যেমন বাড়বে, তেমন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ঢুকতেই সীতাকুণ্ড উপজেলা। চট্টগ্রাম বন্দরের নিকটবর্তিতা, শ্রমিকের সহজলভ্যতা, জমির পর্যাপ্ততা, পাহাড়, মনোরম প্রকৃতিসহ শিল্প স্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশের কারণে এ উপজেলা বহু আগেই শিল্পোদ্যোক্তাদের নজরে পড়ে। ফলে এখানে প্রতি বছর নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের দিকে সীতাকুণ্ডে গড়ে ওঠে দেশের একমাত্র জাহাজভাঙা শিল্প। ফৌজদারহাটে ঝড়ে ভেসে আসা কুইন আল-পাইন নামের একটি জাহাজ  ভাঙার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সময়ের সঙ্গে এ শিল্পের বিস্তার ঘটেছে। বর্তমানে সেখানে ২ শতাধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙা হয়। এ শিল্প থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া দেশের নির্মাণশিল্পের অন্যতম উপাদান রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ লোহাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল পাওয়া যায় সেখানে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানে কাজ করছেন অর্ধলাখ শ্রমিক। গত এক দশকে সীতাকুণ্ডে নতুন করে যোগ হয়েছে আরও বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, জিপিএইচ গ্রুপ, বিএম গ্রুপ, কেএসআরএম অন্যতম। এ ছাড়া বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্প গ্রুপের ৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরাসহ বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া মুরাদপুর সাগর উপকূলে নতুন সমুদ্রবন্দর স্থাপনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে সীতাকুণ্ড এখন দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সীতাকণ্ডেশিল্পের অতিদ্রুত বিকাশের কারণে বেশ কয়েক বছর আগেই এ উপজেলাকে ‘অকৃষি ভূমি উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১২ সালে এখানকার বালুচরগুলো শিল্পজোন হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। তিনি জানান, এ এলাকাসহ মোট পাঁচটি মৌজা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় আনা হয়েছে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চট্টগ্রামের উপসহকারী মহাব্যবস্থাপক জহিরুল হক বলেন, নির্বিতব্য শিল্পাঞ্চল বাড়বকুণ্ড সাগর উপকূলসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। আরও বেশকটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শত শত শ্রমিক বা কর্মচারী-কর্মকর্তা কাজ করছেন। যতই শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে, ততই কর্মসংস্থানও বাড়বে। তা ছাড়া বাড়বকুণ্ডেবেশির ভাগই গ্যাস বিপণন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে।

সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাড়বকুন্ড ও বাঁশবাড়িয়ায় ব্যাপক হারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এখানে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে তেমনই গড়ে উঠছে ছোট ও মাঝারি অনেক কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন হলে বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান ও দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।

সর্বশেষ খবর