বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিলের ভিতর হচ্ছে বড় বড় পুকুর

ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বিলের ভিতর হচ্ছে বড় বড় পুকুর

রাজশাহীর মোহনপুর ও তানোর উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে শিব নদ। এই নদের পাশেই আছে ধানের জন্য উর্বর ভূমি বিলকুমারী বিল ও বিলমাই বিল। এই দুটির মধ্যে বিলমাই বিলে প্রায় ৩০০ বিঘা জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। অথচ এই জমিগুলো ধানের জন্য উর্বর। প্রতি বছর এখানে এই সময়ে সবুজ ধানে ভরে থাকে মাঠ। কিন্তু এবার সেখানে খনন করা হচ্ছে পুকুর। এরই মধ্যে একটি বিশালাকারের পুকুর কাটার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরেকটির কাজ চলছে। দুটি মিলে প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলের জমি ধ্বংস করা হবে। এই জমি ধ্বংস করে পুকুর কাটছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ও তার ভাই ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলু। এমপি ও তার ভাইয়ের সঙ্গে শেয়ারে পুকুর কাটছেন নিরাঞ্জন নামের আরও এক ব্যক্তি। এ ছাড়া এমপি আয়েন ও তার ভাই পাশে আরও একটি পুকুর খননের কাজ শুরু করেছেন। অন্যদিকে দুর্গাপুরের আংরার বিলে প্রায় ২০০ বিঘা ফসলের জমি ধ্বংস করে পুকুর কাটার মহোৎসবে নেমেছেন আবদুর রহিম ও বাবুল হোসেন নামে দুই ব্যক্তি। এখানেও রাজশাহী-৫ আসনের এমপি (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) মুনসুর রহমানের সহযোগিতা নিয়ে বিল দখল করে বিশালাকার পুকুরটি খনন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, বিলের ভিতর পুকুর কেন?

অভিযোগ উঠেছে, দুটি বিল ধ্বংস করে পুকুর খননে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিসের প্রত্যক্ষ মদদ আছে। দুটি বিলের শত শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর কাটার মহোৎসব চললেও প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে কোনো বাধা ছাড়ায় রাত-দিন সমানে চলছে পুকুর খনন। এমনকি দুর্গাপুরের বিলটি বাঁচাতে স্থানীয়রা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় উল্টো তাদেরই নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এ নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন প্রতিবাদকারীরা।

 

তানোরের বিলমাই বিলে গিয়ে দেখা যায়, এই বিলের প্রায় ১৫০ বিঘা জমি কেটে একটি পুকুর কাটার কাজ চলছে। বিলের মাটি কাটার জন্য তিনটি ড্রেজার নামানো হয়েছে। সেই মাটি নিয়ে করা হচ্ছে পাড়। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিব নদের বাঁধের পাশ দিয়ে এই পুকুরটি কাটা হচ্ছে প্রায় ১৫ দিন ধরে।

মোহনপুরের ঘাষিগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘এই বিলে কোনো ফসল হয় না বলে জমি ইজারা নিয়ে পুকুর কাটা হচ্ছে। পুকুর কাটার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো অবৈধ কাজ করছি না।’

রাজশাহীতে পুকুর কাটা অবৈধ বলে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনার বলে জেলাজুড়ে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালালেও জেলার মোহনপুরে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযান হয়নি। ফলে নির্বিচারে এ বছরও চলছে পুকুর খনন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই পুকুর খননের কাজটি একবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও যদি চলে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ এমপি আয়েন উদ্দিন জানান, পুকুর খননের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

দুর্গাপুরের আংরার বিলটি দখল করে পুকুর খনন করছেন আবদুর রহিম ও বাবুল হোসেন নামে দুই ব্যক্তি। এই উপজেলায় অন্য সবগুলো পুকুর খনন বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু স্থানীয় এমপি মুনসুরের সহযোগিতায় এখানে পুকুর খনন চলছে। ফলে উপজেলা প্রশাসনও এ নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারছে না।

ধানের জমি কেটে চারটি বিশালাকার ড্রেজারের মাধ্যমে এখানে পুকুর খনন চলছে। কিন্তু এলাকাবাসী আর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই বিলটি রক্ষার জন্য পরিবেশ আন্দোলনের একজন ব্যারিস্টারকে দিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে পুকুর কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের নির্দেশনা পান এলাকাবাসী। কিন্তু যারা এই নির্দেশনার পেছনে কাজ করেছেন এখন পুকুর মালিকরা উল্টো তাদেরকেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।’

আবদুর রহিম বলেন, ‘আমাদের সব কাগজ সঠিক। তাই পুকুর খনন করছি। এমপি আমাদের সহযোগিতা করেছেন। কারণ ওই জমিতে কোনো ফসল হয় না। বছরে একবার শুধু ধান হয় কিছু কিছু জমিতে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন মৃধা বলেন, ‘তারা আদালত থেকে একটি নির্দেশনা নিয়ে পুকুর খনন শুরু করেন। পরবর্তীতে ওই নির্দেশনাও বাতিল করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু কোনো কাগজ পাইনি। তাই পুকুর খনন চলছে।’

তবে এমপি মুনসুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের পুকুর খননের বিষয়ে আমার জানা নেই। পুকুর খনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আছে। এটি উপজেলা প্রশাসন দেখবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর