বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বরিশালে ২২ সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক সংকট চরমে

কোচিংয়ে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল বিভাগের ২২টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক সংকট চরমে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে অধিকাংশ স্কুলের কার্যক্রম। সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক আছেন সৃষ্ট পদের অর্ধেক। এতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমে চরম ক্ষুব্ধ। এর ফলে কোচিংয়ে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ২২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন মাত্র দুটিতে। এসব স্কুলে গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষক নেই। প্রত্যন্ত এলাকা, বিশেষ করে ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের কাউখালী এবং বরগুনার বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সংকট আরও করুণ। বড় উদাহরণ বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখার ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়ে মাত্র ৪টি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে ৫২টি শিক্ষক পদের বিপরীতে আছেন ১৫ জন। আবার একজন বিএড কোর্সের জন্য এক বছরের ছুটিতে। বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৫১টি শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন। জানা যায়, শিক্ষক সংকটের সুযোগে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা ওই দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের আশপাশে কোচিং সেন্টারের আদলে বেশ কিছু অনুমোদনহীন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। তারা নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের বাগিয়ে নিচ্ছেন। মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশাল নগরীতে নতুন দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। নগরীর কাউনিয়ার শহীদ আরজু মণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়) এবাদুল ইসলাম। ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের কৌশলে হুমকি এবং উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছেন বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা (ছদ্মনাম)। ফল পেয়ে স্কুলের আঙিনায় আনন্দ উল্লাস করছিল তিনিসহ অন্য শিক্ষার্থীরা। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভালো ফলাফলের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিল মালিহা। ভালো ফলাফলের কৃতিত্ব কার জানতে চাইলে মালিহা বলেন, শিক্ষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং মা-বাবা ও তার নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফসল জিপিএ-৫। ক্যামেরা বন্ধ হওয়ার পর মালিহা বলল ‘আঙ্কেল একটা মিথ্যা কথা বলেছি’। সাংবাদিক অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে জানতে চাইল কী মিথ্যা বলেছ। মালিহা বলল আঙ্কেল, শিক্ষকরা কিছুই শেখায়নি। তারা ক্লাসে গল্প-গুজবে সময় পার করে। শিক্ষকরা তাদের কাছে প্রাইভেট-কোচিংয়ে উদ্বুদ্ধ করে, যা শিখেছি কোচিংয়ে। জিলা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুল হালিম বলেন, সরকারি স্কুলগুলোতে পড়াশোনা বলতে নেই। সব কোচিংনির্ভর। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কোচিং না করলে বিভিন্ন সাময়িক পরীক্ষায় প্রত্যাশিত নম্বর দেওয়া হয় না। মাউশি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এবাদুল ইসলাম বলেন, তিনি আরজু মণি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে স্কুলটি আরও গতিশীল হবে আশা এবাদুল ইসলামের। মাউশি সূত্র জানায়, বিভাগীয় সদর বরিশালে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন একমাত্র জিলা স্কুলে। নগরীর চারটি সরকারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদগুলো প্রায় পরিপূর্ণ থাকলেও শিক্ষকরা জেলা কিংবা উপজেলা শহরে যেতে না চাওয়ায় সেখানে শিক্ষক সংকট প্রকট। কোচিং বাণিজ্যের লোভে শিক্ষকরা নানাভাবে তদবির করে বিভাগীয় কিংবা জেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর কর্মরত আছেন। এ কারণে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট সবচেয়ে বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর