শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
ঢাকায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই

তালাবদ্ধ ঘরের তথ্য চোরের কাছে

জড়িয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ

আলী আজম

রাজধানীর রাস্তাঘাট কিংবা বাসাবাড়িতে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এসব কাজে বাধা দিলে হত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না অপরাধীরা। বর্তমানে এটি শুধু পেশাদার চোর-ছিনতাইকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ অপরাধে জড়াচ্ছে। সক্রিয় রয়েছে নারী অপরাধীরাও। এতে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তালাবদ্ধ ফ্ল্যাট বা বাসার খবর চলে যাচ্ছে চোর চক্রের কাছে। আর এ সুযোগে তালা ভেঙে ঢুকে পড়ছে চোরের দল। জানা গেছে, ২০১৯ সালে চুরির ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৫১৭টি। বিপরীতে ছিনতাই হয়েছে ১৫৫টি। ডাকাতি হয়েছে ২১টি। চলছি বছরের জানুয়ারিতেই ১৩৮টি চুরি ও ছিনতাই হয়েছে ১০টি। গত ৩ মার্চ রাতে রাজধানীর সবুজবাগ নন্দীপাড়ায় মা জুয়েলার্সের টিনের চালা কেটে ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা কর্মচারীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় পাশের আরেকটি স্টেশনারি দোকানেও টিনের চালা কেটে ভিতরে হানা দেয় তারা। ১ মার্চ মাতুয়াইলের মেন্দিবাড়ী এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির পর গ্রেফতার হন দুই নারী। গত বছরের ১৬ নভেম্বর উত্তরার সেক্টর-১২, রোড-৯-এর একটি বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ, ৭ ভরি সোনাসহ জিনিসপত্র চুরি হয়। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আজও এর কিনারা করতে পারেনি। ভুক্তভোগী রাশেদুর রহমান জানান, ‘ঘটনার দিন বারান্দা ও জানালার গ্রিল কেটে চোর ঢুকে বেডরুম থেকে একটি ল্যাপটপ, আলমারি থেকে প্রায় ৭ ভরি সোনা চুরি করে নিয়ে যায়।’ ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে মুগদায় রিকশায় কমলাপুর রেলস্টেশনে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রাণ হারান তারিনা বেগম লিপি নামে এক নারী। এর তিন দিন আগে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় মোটরসাইকেলে এসে ছিনতাইকারী রিকশা আটকে এক দম্পতির কাছ থেকে ব্যাগসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ভোরে হাই কোর্ট মোড়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র আল-আমিন ও শান্তকে।

১৮ জানুয়ারি উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডে সকালে রিকশায় স্কুলে যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন এক শিক্ষিকা। ছিনতাইয়ের সময় নারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তার ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও ওই ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ডিএমপি-সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ১৩৮টি চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটে তেজগাঁও বিভাগে ২৮টি। আর সবচেয়ে কম লালবাগ বিভাগে পাঁচটি। জানুয়ারিতে রাজধানীতে ছিনতাই হয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে লালবাগ বিভাগে ছয়টি। আর সবচেয়ে কম মিরপুর ও ওয়ারী বিভাগে একটি করে। এই সময়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে দুটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার জন্য সুযোগ পেলেই চুরি বা ছিনতাই করা হচ্ছে। রাজধানীর অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়ক, ফ্লাইওভার, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালের আশপাশে হামেশাই ঘটছে ছিনতাই। বাসাবাড়ি তালাবদ্ধ পেলেই চোর চক্রের কাছে খবর পৌঁছে যাচ্ছে। এ সুযোগে বাসায় ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সটকে পড়ছে চোর।

ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতি সনাতন অপরাধের অংশ। মাদক সেবন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করার সুযোগ ও পূর্বশত্রæতার জেরে ঘটনাগুলো বাড়ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি চুরি ও ছিনতাইয়ের পেছনের কারণগুলো সমাধানে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এগুলো থেকে স্থায়ী মুক্তি সম্ভব।’

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন অপরাধীকে। একইসঙ্গে বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পেট্রল জোরদারসহ গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে ছিনতাইবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর