শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভোটার খরা কাটাতে চায় আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রাম সিটি ও পাঁচ উপনির্বাচন

রফিকুল ইসলাম রনি

চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচনে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়ে। এখানে মোট ১৭০ কেন্দ্রের মধ্যে সিটি করপোরেশনভুক্ত ১০১ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সে তুলনায় গ্রামে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশি। আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি ভোট। সদ্যসমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশের কম। আর আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী ১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগেরই নিজস্ব ভোট আছে প্রায় ৪০ ভাগ। ২০০১ সালে চরম ভরাডুবির মধ্যেও ৩৫ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। গত ১১ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকায় এখন ‘লীগে লীগে’ থৈ থৈ। অথচ ভোটার উপস্থিতি এত কম! এ নিয়ে চিন্তিত দলটি। উদ্বিগ্ন হাইকমান্ডও। আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও ৫টি উপনির্বাচনে ভোটার খরা কাটাতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এ জন্য মেয়র ও এমপি প্রার্থীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ মার্চ ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ এবং ২৯ মার্চ বগুড়া-১ আসন ও যশোর-৬ আসনে উপনির্বাচন হবে।  দলের নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, প্রার্থীদের ভোটারদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া, ঘরে ঘরে যাওয়া, নারী ভোটার টানতে নারীদের মাঠে নামানো, প্রচারণার সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের সেলফিবাজি বন্ধ রাখা, ভোটের দিন প্রয়োজনে বয়স্ক ও নারী ভোটারদের কেন্দ্রে আসার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করা। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচারণায় সম্পৃক্ত করা। দলের একাধিক নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।  দলীয় সূত্র মতে, উপনির্বাচন ও সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া ভাবিয়ে তুলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। শুধু উপ ও সিটি নির্বাচনই নয়, পেশাজীবী সংগঠনগুলোতেও ভোটার উপস্থিতি কম কিংবা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজয় ভালোভাবে গ্রহণ করছেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার) নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে জয় পেয়েছে বিএনপি সমর্থিত নীল দল। এতে ৯ হাজার ২৯৯ জন সদস্য তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ঢাকা বার সমিতিতে পরাজয়ের পর সরকার সমর্থক একজন সাবেক ছাত্রনেতা জোবায়দুল হক রাসেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘দলীয় এপিপি, পিপি এবং অতিরিক্ত পিপি নিয়োগে সাড়ে আট হাজার দরখাস্ত করেছিল- কিন্তু ঢাকা বার নির্বাচনে দলীয় ভোট পায় চার হাজার। এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দলীয় ভোটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হবেই। সাধারণ ভোটারদের মাঝেও এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। ফলে তাদের অনেকেই ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। এই অবস্থা কাটিয়ে তুলতে এখন থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে তৃণমূলের প্রতিটি সংগঠন শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, ভোটারদের অনীহা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। সে কারণে আসন্ন নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যায় সে দিক আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। দলটির নেতারা বলছেন, সিটিসহ উপনির্বাচনগুলো সব থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে দলের প্রধান সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপনির্বাচন এবং সিটি নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য আছে। সম্মানিত ভোটাররা যেন কেন্দ্রে আসে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে কমিটি করে দিচ্ছি। এ ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা সিটি ভোটে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা, যানবাহন না থাকা, দীর্ঘ ছুটি থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। আশা করি চট্টগ্রাম সিটিতে সে সংকট হবে না। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা কাজ শুরু করেছেন। আশা করি ভোটার উপস্থিতির খরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব। 

ঢাকার সিটি ভোট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটিতে ভোটার ছিল ৫৪ লাখের বেশি। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল ৩০ ভাগেরও কম। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠনগুলোর মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অধিকাংশ সমর্থকই ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, ঢাকা সিটিতে মেয়র প্রার্থীরা পাড়া-মহল্লায় মিছিল-সমাবেশ করে বক্তব্য দিলেও প্রকৃতপক্ষে ভোটারদের সঙ্গে নিজেরা সংযুক্ত হতে পারেননি।

সমাবেশ বা প্রচারণায় নির্দিষ্ট কিছু নেতা-কর্মী দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষ বা ভোটাররাও প্রার্থীদের কাছে ঘেঁষতে পারেননি। ভোটারদের নিরুৎসাহিত হওয়ার এটাও একটা কারণ। এ ছাড়া বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর প্রচারণা সেলফিবাজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাননি অনেকেই। আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি ও ৫টি উপনির্বাচনে এ অবস্থার অবসান হবে।

বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমিরুল আলম মিলন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের গত এগারো বছরের উন্নয়ন এবং নৌকার জনপ্রিয়তায় সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি হবে। দলীয় নেতা-কর্মীরা সেভাবেই কাজ করছেন। আমিও সম্মানিত ভোটারদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি, আপনারা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসুন। ভোট দিয়ে সেবক নির্বাচিত করুন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর