শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

কোথাও নেই ছাত্রলীগ, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছাত্রদল

সিলেটে ছাত্ররাজনীতি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে ছাত্ররাজনীতি এখন দ্বিমুখী ধারায় প্রবহমান। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন থাকা সত্ত্বেও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সিলেটে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। রাজনীতির মাঠে কোথাও দেখা মিলছে না কমিটিহীন ছাত্রলীগের। অন্যদিকে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল স্থবিরতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলছে। একই সঙ্গে এ দুই শাখার আওতাধীন ৬৭টি ইউনিটেও দেওয়া হচ্ছে নতুন কমিটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটে ছাত্রলীগের অবস্থান এখন কোথায়, তা জানতে একটি তথ্যই যথেষ্ট। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গতকাল সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ২০ দিনের বেশকিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু ‘বাস্তবায়নকারী’ সংগঠনের তালিকায় যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা লীগ সবার নাম থাকলেও নেই ছাত্রলীগের নাম!

জানা গেছে, সিলেট জেলা ছাত্রলীগে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়। ১০ সদস্যের সেই আংশিক কমিটি ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ১৪১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। এ কমিটি নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব-বিবাদ। হয় সংঘর্ষও। ফলে চার মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর প্রত্যাহার করা হয় স্থগিতাদেশ। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ হত্যাকা-ে প্রধান আসামি হন জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী। সে বছরের ১৮ অক্টোবর জেলার কমিটি বাতিল করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই থেকে এখন অবধি কমিটিহীন জেলা ছাত্রলীগ। অন্যদিকে, মহানগর ছাত্রলীগে ২০১৫ সালের ৪ জুলাই ৪ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সেই ৪ নেতা তিন বছরেরও বেশি সময়ে করতে পারেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র। একই সঙ্গে ‘নৈতিক স্খলনজনিত’ অভিযোগে শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম তুষারকে বহিষ্কার করা হয়। এ শাখায় এখন অবধি আর নতুন কোনো কমিটি আসেনি। বেশ কিছুদিন আগে একবার কমিটিতে আসতে আগ্রহীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এরপর আর এগোয়নি কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতেও দেখা মিলছে না তাদের। কমিটিতে আসতে আগ্রহীরা এখন ছাত্রলীগ বাদ দিয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন। এদিকে, সিলেটে ছাত্রদল এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মরিয়া। সিলেট জেলা ছাত্রদলের অধীনে ৩৪টি এবং মহানগর ছাত্রদলের অধীনে ৩৩টি ইউনিট আছে। এসব ইউনিটে কমিটি গঠন করে উভয় শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

 

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৩ জুন জেলা ছাত্রদলে ২৮ সদস্য এবং মহানগর ছাত্রদলে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কয়েকদিন আগে উভয় শাখার সব ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে সব শাখায় নতুন কমিটি দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট মহানগর ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি ওমর ফারুক কাওছারের নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ওইদিন রাতে এ শাখার আওতাধীন ৩৩টি ইউনিটের মধ্যে ১৭টিতে কমিটি দেওয়া হয়। বাকিগুলোতেও কয়েকদিনের মধ্যে কমিটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ। এদিকে, ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রদলের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ওই প্রতিনিধি দল। জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন সব উপজেলা ও পৌরসভায় ২০০৫ সালে এসএসসি পাসকৃত এবং কলেজে ২০১০ সালে এসএসসি পাসকৃতদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় কেন্দ্র। কেন্দ্রের নির্দেশে উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজে কমিটি করতে কয়েকদিন আগে পাঁচটি সাংগঠনিক কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন।

সর্বশেষ খবর