সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

টাকার অবমূল্যায়ন করা হবে না

-------- অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠন। মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। আরও ১০০ জোন করা হবে। এসব জোনে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হবে না। এতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী কিন্তু পুঁজিবাজারে ধস। পুঁজিবাজার ঠিক করা আমাদের কাজ নয়। অর্থনীতি ঠিক করতে আমি কাজ করছি। পুঁজিবাজারও শক্তিশালী হবে।’ রাজধানীর শাহবাগে একটি হোটেলে গতকাল আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবিসি নিউজ ও কমিউনিটি ব্যাংক এ সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আসিকুর রহমান।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান, ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাবুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন, ড. নাজনীন আহমেদ, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান প্রমুখ। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন চলছে’ শীর্ষক সেমিনার সঞ্চালনা করেন শারমিন চৌধুরী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ জয় করে মানুষ। ঘোড়া বা মেশিন যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তারা জয় করে না। আমরাও মেশিন ব্যবহার করছি কিন্তু জয় আমাদের হবে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। শূন্য থেকে শুরু করেছি। রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দিয়েছি। প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দিয়েছি। এগুলো হিসাবে নিলে গ্রাহকরা অনেক বেশি পায় প্রতি ডলারের বিপরীতে। আলাদা করে টাকার অবমূল্যায়ন করার প্রয়োজন নেই। রপ্তানি কমছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু গত ১০ বছরে আমাদের সমমানের দেশগুলোর রপ্তানি কমেছে। শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের রপ্তানি কমছে।’ তিনি বলেন, ‘শিল্পায়নের বিকল্প নেই। আমাদের শিল্পায়ন করতে হবে। সারা দেশে নতুন আরও ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। কয়েক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা পুরোপুরি ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ব। এসএমই বাদ দিয়ে শিল্পায়ন হবে না। এসএমই খাতে আমরা আরও বেশি প্রণোদনা দেব।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। আইনে আমাদের কিছু ঘাটতি আছে। লিমিটেশন অ্যাক্ট নেই, খেলাপি আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নেই আমাদের। এগুলো করব আমরা। ইতিমধ্যে কিছু আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সরকার ব্যবসা করবে না। ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া সরকারের কাজ। সুদহার বেশি হলে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। এ জন্য আমরা সুদহার কমিয়েছি। ট্যাক্স জিডিপি আমাদের কম। এর বড় কারণ সেইফটি নেট অনেক বড়। বিভিন্ন খাত থেকে আমরা প্রণোদনা দিয়েছি।’

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী কিন্তু পুঁজিবাজার ধস, তা তো হতে পারে না। এগুলো সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে হবে। সরকার সমাধান করে দেবে না। সরকার পুঁজিবাজার সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তবে পুঁজিবাজারের সমস্যা সমাধানে সব ধরনের সহযোগিতা সরকার করবে। সরকারের কাজ হবে পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধ করার জন্য এ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে, এর রিফ্লেকশন যাবে পুঁজিবাজারে। এটা ডাইরেক্ট লিঙ্ক।’

সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হচ্ছে। আয় বণ্টনে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। মানুষের আয়বৈষম্য খুব বেশি। এসডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা যাবে না। দরকারও নেই। দুটি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে পারলেই হবে। সে দুটি হলো আয়বৈষম্য কমানো এবং সবাইকে আয়ের মধ্যে নিয়ে আসা। ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধাগুলো সরিয়ে দিন। এমনিতেই ব্যবসা হবে।’

জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আর্থিক কাঠামো পরিবর্তন খুবই জরুরি। ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে অর্থনীতি অনেক দূর যেতে পারে না। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি পুরোটাই ব্যাংকনির্ভর। এই নির্ভরতা কমিয়ে অন্য খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। পুঁজিবাজার ঠিক করতে হবে। পুঁজিবাজারের সমস্যা নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

মুুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পৌঁছাতে হলে এখনকার চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু আমাদের বিনিয়োগ সে তুলনায় খুবই কম। এই সময়ে কমপক্ষে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। মানসম্মত শিক্ষার অভাব রয়েছে। শিক্ষা খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ লাগবে। আমাদের আয়বৈষম্য যা রয়েছে, এটা দিয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর