দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটির পথে এগিয়ে যাচ্ছে সিলেট। সেই সঙ্গে দেশের প্রথম ডিজিটাল সরকারি হাসপাতাল হতে যাচ্ছে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। মুজিববর্ষেই সিলেট বিভাগের চিকিৎসাসেবার সর্বোচ্চ এই প্রতিষ্ঠানটিকে ডিজিটালাইজেশন করতে চায় কর্তৃপক্ষ। এতে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে হাসপাতালের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তথ্যও থাকবে সংরক্ষিত। রোগীদের তথ্য ছাড়াও এই প্রকল্পে থাকছে ‘ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট’, ‘অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট’ ‘সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘টেলিমেডিসিন সিস্টেম’। ওসমানীতে এই প্রকল্প সফল হলে দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোকেও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। প্রকল্পটিতে প্রযুক্তি ও কারিগরি সহযোগিতা দেবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর রোগের সব তথ্য ডাটাবেইসে সংরক্ষণ করা হবে। এতে ওই রোগী পুনরায় চিকিৎসা নিতে এলে তার চিকিৎসা তথ্য পেতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে আর বেগ পেতে হবে না। কত দিন আগে ওই রোগীকে কী ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, কী কী পরীক্ষা করানো হয়েছিল এবং তার ফলাফল কী ছিল সবই সংরক্ষিত থাকবে ডাটাবেইসে।
ওসমানী হাসপাতালকে ডিজিটালাইজেশন করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গতকাল সকালে হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হয় ‘হসপিটাল হেলথ ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা। ওই সভায় হাসপাতাল ডিজিটালাইজেশনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন প্রতিমন্ত্রী পলক। সভায় প্রজেক্টরে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের নানা দিক তুলে ধরেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসুম।
তিনি জানান, হাসপাতালের কী কী সেবা প্রকল্পের আওতায় আসবে, সেগুলো বাস্তবায়নে কী কী কাজ করতে হবে সেগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। কিছু দিনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের একটি রূপরেখা তৈরি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।প্রকল্প পরিচালক মো. মহিদুর রহমান খান জানান, এই প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালের রোগীর তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রশাসনিক অনেক কার্যক্রমও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আসবে। এই কাজে কী কী সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার লাগবে তার চাহিদাপত্র দেবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। আশা করা যাচ্ছে দুই-তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজের দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হবে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইউনুছুর রহমান জানান, হাসপাতালে এখন অনেক সময় নিয়ে চিকিৎসকদের রোগী দেখতে হয়। ডিজিটালাইজেশনের কাজ শেষ হলে রোগীর তথ্য ডাটাবেইসে সংরক্ষণ থাকবে। এতে ফলোআপ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর রোগের পূর্ব ইতিহাস চিকিৎসকরা ডাটাবেইস থেকে সহজে জানতে পারবেন। এতে চিকিৎসা সময় বাঁচবে এবং হাসপাতালে রোগীর চাপও কমবে।
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক জানান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়ে ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্পটি সফল হলে ওসমানী হাসপাতালের সঙ্গে আরও কয়েকটি হাসপাতালকে সংযুক্ত করা হবে। যাতে অন্য হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসকরা রোগীর রোগের পূর্ব ইতিহাস জানতে পারেন। এ ছাড়া এ প্রকল্প থেকে সুফল পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ডিজিটালাইজেশন করার পরিকল্পনা রয়েছে।