শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
খিলগাঁওয়ে দুই সন্তানকে হত্যা

শারীরিক যন্ত্রণা ছাপিয়ে মানসিক যন্ত্রণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুড়ে যাওয়া শরীরে তীব্র যন্ত্রণা। সেই সঙ্গে সন্তান হত্যার দুঃসহ স্মৃতি। অবার সুস্থ হলেই জেলখানার বন্দীজীবন। এ রকমই এক মানসিক যন্ত্রণায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ছটফট করছেন আক্তারুন্নেছা পপি। ফুটফুটে দুই সন্তানকে জবাই করে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। গত ৭ মার্চ রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে ঘটেছিল ঘটনাটি। পপির পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, পপির শারীরিক যন্ত্রণাকেও ছাপিয়ে গেছে তার মানসিক যন্ত্রণা। নিজের কৃতকর্মের অনুশোচনায় প্রতি মুহূর্তে দগ্ধ হচ্ছেন তিনি। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পপি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। তবে ১৮ শতাংশ পুড়ে যাওয়া পপির সুস্থ হতে এখনো দেড় মাস লাগবে। দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় পপির স্বামী মোজাম্মেল হক বিপ্লব বাদী হয়ে স্ত্রীকে একমাত্র আসামি করে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি পপি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছেন। দুই সন্তানকে হত্যা করে এখন তিনি তীব্র অনুশোচনায় ভুগছেন।

 স্বজনরা রাত-দিন তার পাশে থেকে       চেষ্টা করছেন সেসব দুঃসহ স্মৃতি আড়াল করতে। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দিনের পর দিন আর্থিক অসচ্ছলতায় হাতাশাগ্রস্ত হয়ে পপি দুই সন্তানকে হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পুলিশের কাছেও সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পপি পুলিশকে জানান, তাদের বিবাহিত জীবনের ১৩ বছরে মধ্যে নয় বছরই তিনি সন্তানদের নিয়ে গোড়ানে বাবা-মার সঙ্গে থাকতেন। স্বামী বিপ্লব সব সময়ই মুন্সীগঞ্জে ছিলেন।

 সেখানে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসা করতেন।

তার দুই মেয়ে মেহজাবিন আলভি (১২) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (৭) পড়াশোনা করত ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে। কিন্তু তার স্বামী ঠিকমতো সংসারের খরচ দিতেন না। মাসে সংসার খরচ হিসেবে দিতেন মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার ব্যয় ও সংসার খরচ মেটাতে পারতেন না তিনি। টাকার কথা বললেই তাকে বকাঝকা করতেন। সংসার জীবনে তিনি ছিলেন চরম অশান্তিতে। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকায় একসময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর এ হতাশা থেকেই সন্তানদের হত্যা করেন পপি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাহাত খান বলেন, ‘পপি এ মামলার একমাত্র আসামি। তিনি নিজে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলছেন পপির সুস্থ হতে এক থেকে দেড় মাস লাগবে। এরপর তাকে আদালতে নিয়ে যাব।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পপি যদিও হত্যার কথা স্বীকার করেছেন কিন্তু একজন মা এত সহজে নিজ সন্তানদের হত্যা করতে পারেন না। অবশ্যই এর পেছনে আরও অনেক কারণ আছে। তদন্তে আমরা সেগুলোই বের করার চেষ্টা করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর