রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশেষ শিশুদের জন্য সারা দেশে হচ্ছে বিশেষ স্কুল

প্রতি জেলায় থাকবে কমপক্ষে একটি করে

আকতারুজ্জামান

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সারা দেশে বিশেষ ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে এই বিশেষ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এসব স্কুল হবে সুবিন্যস্ত ও প্রতিবন্ধীবান্ধব। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ হবে সুগঠিত ও প্রবেশ উপযোগী। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রও হবে সুবিন্যস্ত। শিক্ষার্থীর চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী অডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, হিয়ারিং এইডের ব্যবস্থাসহ ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি ও থেরাপিসহায়ক উপকরণ এবং কাউন্সিলিং ব্যবস্থাও থাকবে স্কুলেই। চলতি মাসেই এসব স্কুল অনুমোদন দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার শিক্ষায় নিয়ে নিতেই তাদের উপযোগী করে এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। তাদের জীবন দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি মূলধারার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণসহ স্বনির্ভর ও স্বাধীন জীবনযাপনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সম্প্রতি ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯’ অনুমোদনও করা হয়েছে।

নীতিমালার তথ্যমতে- বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির ও বেতন-ভাতার জন্য কমপক্ষে ১০০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী থাকতে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে থাকতে হবে কমপক্ষে ৭৫ জন। এনডিডি সংশ্লিষ্ট (অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী) বিদ্যালয়ে বেতন-ভাতার জন্য কমপক্ষে ৭৫ জন এনডিডি শিক্ষার্থী থাকতে হবে। তবে হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, পশ্চাৎপদ এবং দুর্গম এলাকা ও পার্বত্য এলাকার জন্য শিক্ষার্থী সংখ্যা শিথিল থাকবে। তবে, মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কোনো এলাকায় পাঁচ শতাধিক প্রতিবন্ধী থাকলে সেখানেও একটি বিদ্যালয় অনুমোদন পাবে।

জানা গেছে, অটিজম বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হবে ১ অনুপাত ৫। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। আর সেরিব্রাল পালসি, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এবং ডাউন সিনড্রোম বৈশিষ্টসম্পন্ন বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিপরীতে ১০ জন, প্রতিবন্ধিতা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিপরীতে ১৫ জন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিপরীতে ১২ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য গাড়ি বা ভ্যান থাকবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ছাড়াও বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ইনক্রিমেন্ট পাবেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও বেতন-ভাতা প্রদানকারী কমিটির সভাপতি থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধিতা)।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধিতা) মোহাম্মদ ইসমাইল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার প্রতি জেলায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেবে এমন ঘোষণার পর সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো স্কুল গজিয়ে উঠেছে। এসব স্কুলের কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট ২ হাজার ৬৯৭টি বিদ্যালয়ের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৫২৫টি বাছাই করা হয়েছে। অধিকতর যাচাই-বাছাই করে অযোগ্যদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চলতি মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। যোগ্য শিক্ষক, যোগ্যতা থাকা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষার্থীদের সংখ্যার ওপর বিবেচনা করে প্রতিবন্ধী স্কুল অনুমোদন দেওয়া হবে। তদবির করে কোনো প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, প্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা অষ্টম গ্রেডে বেতন পাবেন। যোগ্যতা হিসেবে স্নাতকসহ বিএসএড বা এমএসএড এবং প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও ১০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রতিবন্ধী শিশুর অভিভাবক (বাবা-মা) এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। সিনিয়র শিক্ষক বা সিনিয়র থেরাপিস্টরা নবম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষক বা সহকারী থেরাপিস্টরা ১০ম গ্রেডে বেতন পাবেন। তবে মিথ্যা তথ্য প্রদান, ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ, ভুয়া শিক্ষার্থী, ভুয়া ফলাফল তৈরি, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশের বরাদ্দ কর্তন বা বাতিল করা যাবে। এসব বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য থাকবে তিন বছর মেয়াদি ১৩ সদস্যবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি কমিটির সভাপতি থাকবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর