শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

আইন প্রয়োগে কোয়ারেন্টাইনে বাধ্য করতে হবে

করোনা নিয়ে গোলটেবিলে বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা নতুন ভাইরাস। এ ব্যাপারে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও চিকিৎসা মানুষের হাতে নেই। সারা পৃথিবী আজ এক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সতর্কতার অভাবে অনেক উন্নত দেশ এটা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, যে চীন থেকে ভাইরাসটির উৎপত্তি, তারা রাতারাতি এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ছয় কোটি মানুষকে কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এনে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে এখনো ভাইরাসটি মহামারী আকার নেয়নি। তবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সমাজে একজন থেকে অন্যজনে ছড়ানো) শুরু হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এ অবস্থায় রোগটি নিয়ন্ত্রণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলেই জানাতে হবে এবং কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কোয়ারেন্টাইনে বাধ্য করতে হবে।

গতকাল ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘করোনাভাইরাস : সতর্কতায় সুরক্ষা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে চিকিৎসা খাতের বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। দৈনিক কালের কণ্ঠ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. এম এ ফয়েজ, ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান, আইইডিসিআর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন, ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাকিল আহম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. নাজমুল আহসান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ভাইরাসটি মোকাবিলায় আতঙ্ক নয়, দরকার সচেতনতা। এ রোগে মানুষের মৃত্যু যেমন হচ্ছে, অনেকে ভালোও হচ্ছেন। কারও উপসর্গ দেখা দিলে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে তার উচিত বিষয়টি কন্ট্রোল রুমে জানানো এবং নিজেকে আলাদা রাখা। বাড়ির অন্য সদস্যদেরও দায়িত্ব তাকে কোয়ারেন্টাইনে বাধ্য করা। এটাই এখন ভাইরাসটি মোকাবিলার একমাত্র পথ। কোনো করোনা রোগীকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি না করানোর পরামর্শ দিয়ে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, এতে রোগটি অন্যদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এসব রোগীকে অন্য কোথাও আইসোলেশনে রাখতে হবে এবং সেখানে যারা চিকিৎসার দায়িত্বে থাকবেন তাদের উচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। উপসর্গ না থাকলে ঢালাওভাবে টেস্ট করারও দরকার নেই। কারও উপসর্গ দেখা দিলে তাকে ঢাকায় আসার দরকার নেই। এতে রোগটি দ্রুত ছড়াবে। ফোনে জানালে মেডিকেল টিম গিয়ে তার টেস্টের ব্যবস্থা করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক চিকিৎসকদের প্রতি কন্ট্রোল রুমে দৈনিক ৫-১০ মিনিট কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাই মিলে আজ এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। যে কন্ট্রোল রুম চালু করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম। করোনা টেস্টের জন্য এক লাখ কিট আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও আনা হবে। করোনা রোগীর জন্য দেশে ফ্রি ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটকে খালি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে তার জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, উপসর্গ দেখা দিলেই জানাতে হবে এবং নিজেকে আলাদা রাখতে হবে। বক্তারা করোনা মোকাবিলায় নানা পরামর্শ দেন। তারা বলেন, অনেক চিকিৎসক ও ক্লিনিক করোনার উপসর্গ শুনলে রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে একটা দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি। এ ছাড়া কোয়ারেন্টাইন কোথায় হবে সেটা ঠিক করা জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তি ও সন্দেহের কারণে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে একত্রে রাখলে সংক্রমণ বাড়বে। ভারতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের হাতে অমোচনীয় কালি দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদেরও এমনটা দরকার। বাংলাদেশে প্রথম রোগী পাওয়া গেছে বিদেশফেরতদের মধ্য থেকে। এরপর তাদের আত্মীয়। তাই বিদেশ থেকে আসাদের বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। এটা সমাজে ছড়িয়ে পড়লে মহামারী আকার নেবে।

সর্বশেষ খবর