সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভয়াবহ সংকটে পোশাক খাত

দেড় বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল, দিশাহারা গার্মেন্ট ও নিট গার্মেন্ট মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ভয়াবহ সংকটে পোশাক খাত

দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের আন্তর্জাতিক ক্রেতারা প্রায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের অর্ডার বা ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক  সমিতি- বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক।

গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন- ভয়াবহ অবস্থা চলছে পোশাকশিল্পে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ১ হাজার ৮৯টি কারখানার অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। বাতিল ও স্থগিত হওয়ার পোশাক পণ্যের সংখ্যা ৮৭ কোটি ৩২ লাখ ৩৬ হাজার ৬২২টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।  বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, করোনাভাইসের কারণে ডিসেম্বর থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত যে সব পোশাক কারখানা অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়েছে, তাতে ৭ লাখ ২২ হাজার ৭৪৯ জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। ফলে কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের নিয়ে বিপদে আছেন। মালিকরা গার্মেন্টগুলো চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

কয়েকদিনে নারায়ণগঞ্জের শতাধিক রপ্তানিমুখী নিট গার্মেন্ট কারখানার কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। যার পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকা। এতে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশখ্যাত নারায়ণগঞ্জের নিট পোশাক খাত। নতুন কার্যাদেশ না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে অনেক গার্মেন্টও। পোশাক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিয়েও তৈরি হতে পারে বড় ধরনের সংকট। ঈদ সামনে রেখে ভয়াবহ সংকট অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন গার্মেন্ট মালিকরা। জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। সেই ধারাবাহিকতায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশের পোশাক খাতও। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ বলছে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলাচ্ছে ক্রেতাদের সিদ্ধান্ত। এতে তারা দিশাহারা  হয়ে পড়ছেন। বিকেএমইএ সহসভাপতি (অর্থ) ওআরএস কম্পোজিটের মালিক মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল জানান, বর্তমানে গার্মেন্ট খাতের অবস্থা অতিমাত্রায় ভয়াবহ। গত ১২ মার্চ তার দেড় লাখ পিসের শিপমেন্ট কাভার্ডভ্যানে তোলার পরে মেইল আসে স্থগিতের জন্য। ১৭ মার্চ একই বায়ারের আরও দেড় লাখ পিস শিপমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। সেটাও স্থগিতের মেইল এসেছে। এই দুটি শিপমেন্টের ব্যাক টু ব্যাক এলসির সব পেমেন্ট করা হয়েছে। কিন্তু বায়ার জানিয়েছে, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে কোনো ধরনের পেমেন্ট দিতে পারবেন না। ইতালিতে শিপমেন্ট পোর্টে পৌঁছেছে। কিন্তু বায়ার সেটা নিতে পারছে না। সেখানে হোম কোয়ারেন্টাইনের কারণে। ওই বায়ারও কয়েক মাসের মধ্যে টাকা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। বায়াররা মেইল দিয়েছে নিটিং কাটিং ডাইং যে অবস্থায় রয়েছে সেটা স্থগিত রাখতে। অনেকেই এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।  সামনের মাসে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারব কিনা জানি না। আমি সব গার্মেন্ট মালিকদের একটা কথাই বলছি, প্রয়োজনে পার্টি পেমেন্ট বন্ধ রেখে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য অর্থ সঞ্চিত রাখার জন্য। আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ৯৯ ভাগ কারখানাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমার পোল্যান্ডের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দুই দফার রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রতি ঘণ্টায় রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিতের মেইল পাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা।

এ অবস্থায় সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হব। বিকেএমইএর পরিচালক মাদার কালার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী এম মনসুর আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ফেরত যাচ্ছে। ইউরোপ থেকে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার বন্ধ রেখেছে। ইতালি ও জার্মানি প্রচুর পণ্য নেয়। এখন ইতালির যে অবস্থা সেখানের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফোনই ধরে না। করোনা মোকাবিলা করতে না পারলে গার্মেন্টশিল্প ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। বিকেএমএইর সচিব সুলভ চৌধুরী জানিয়েছেন, কয়েকদিনে শতাধিক নিট কারখানার কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিকেএমইএর আরও কয়েক নেতা বলেন, ‘গার্মেন্ট খাতের জন্য বিরাট হুমকি। সামনে ঈদ। শ্রমিকদের বেতনের বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর