মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নকল ও নিম্নমানের মাস্কে বাজার সয়লাব

সংকট হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ডেটল ও স্যাভলনের

জিন্নাতুন নূর

করোনা সংক্রমণের ভয়ে গোটা বিশ্বের সঙ্গে আতঙ্কে কাঁপছে বাংলাদেশ। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ও পেশাজীবী এখন ফেসিয়াল মাস্ক কিনতে ব্যস্ত। ভালো চাহিদা থাকায় দেশব্যাপী ফার্মেসির বিক্রেতা থেকে শুরু করে ফুটপাথের বিক্রেতা, মুদি ও কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ীরাও দেদারসে মাস্ক বিক্রি করছেন। বাজার ছেয়ে গেছে লাল, নীল, বেগুনি, গোলাপি হরেক রং এবং সাধারণ কাপড়ে তৈরি মাস্ক ও এন৯৫ মাস্কে। কিন্তু মাস্কগুলো এতই নিম্নমানের যে এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ব্যবহারকারীরাও নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। আবার আশঙ্কাজনক হলেও অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে জীবাণু ধ্বংসকারী স্যাভলন, ডেটল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো পণ্যের। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে বিক্রি হওয়া এই মাস্কগুলোর বেশির ভাগই নকল। বিশেষ করে এন৯৫ মাস্কটি হুবহু নকল করে তা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এসব ব্যবহারে একদিকে ভাইরাস প্রতিরোধ হওয়া নিয়ে যেমন সন্দেহ রয়েছে, তেমনি আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় মান নিশ্চিত না করেই মাস্কগুলো বাজারে সরবরাহ করছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। আবার বাজারে বিক্রি হওয়া মাস্কের দামও রাখা হচ্ছে দুই গুণ থেকে পাঁচ গুণ বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে এখন যে মাস্কগুলো পাওয়া যাচ্ছে এর বেশির ভাগই বড়জোর ব্যবহারকারীকে ধুলাবালি থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। কিন্তু এগুলো ভাইরাস প্রতিরোধে অকার্যকর। লক্ষ্য করে দেখা যায়, যেসব মাস্ক বিক্রি হচ্ছে সেগুলোতে যেদিক দিয়ে বাতাস ফিল্টার হয়ে ঢোকার কথা সেখানে ফিল্টার পেপার নেই। বরং সাদা বক্স বরাবর অংশে কাপড় দেওয়া। ফিল্টার পেপারের বদলে শক্ত ফোম দিয়ে মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে। অথচ একটি ভালো মাস্কে যে ফিল্টার পেপার ব্যবহার করা হয় তা কমপক্ষে পিএম ২.৫ মানের। এটি দেখতে অনেকটা রাবারজাতীয় এবং এতে থাকা ছিদ্রকে মাইক্রোপোর বলে। বাতাসে থাকা ভাইরাস এই ছিদ্রের ফাঁকে আটকে যাওয়ার কথা। কিন্তু নকল মাস্কগুলোর ভাইরাস আটকানোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ আছে।

 এ ছাড়া একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাভের আশায় শপিং ব্যাগে ব্যবহৃত পেপার দিয়ে যেনতেনভাবে ভেন্টিলেশন ক্যাপ লাগিয়ে মাস্ক তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। এই মাস্কগুলোর অনেকগুলো নন-ওভেন কাপড় দিয়ে তৈরি, যা অত্যন্ত নিম্নমানের আর এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের ফিল্টার। অথচ ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিশন কর্তৃপক্ষের মতে, সাধারণ সার্জিকাল মাস্ক এবং এন৯৫ মাস্কগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন এগুলো দিয়ে সহজে শ্বাস নেওয়া যায়। কিন্তু দেশে যেসব মাস্ক পথেঘাটে বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে ব্যবহারকারীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। উদ্বেগজনক হলেও সম্প্রতি গাজীপুরের টঙ্গীতে বিভিন্ন হাসপাতালের ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে তা রোদে শুকিয়ে আবারও বিক্রির অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে নিম্নমানের মাস্ক উৎপাদনকারীদের শনাক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযানে আমরা লক্ষ্য করেছি বাজারে যে মাস্ক বিক্রি করা হচ্ছে তা নিম্নমানের এবং এটি যারা বানাচ্ছেন তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে তা বানাচ্ছেন না। কেউ কেউ ভ্যানগাড়িতে খোলা অবস্থায় এগুলো বিক্রি করছেন। আমরা অভিযানে দেখেছি মিটফোর্ড এলাকায় বিভিন্ন পাইকারি ওষুধের দোকানে ৫০ টাকার মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়। আবার অনলাইন শপগুলোতে লাগামহীন মূল্যে মাস্ক বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।’

বাজারে বিক্রি হওয়া মাস্কগুলোর ওপর কোনো মূল্য না থাকায় যে যার মতো দাম আদায় করছে। অথচ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মাস্কের জন্য দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে উচ্চ মূল্যে মাস্ক বিক্রির জন্য এরই মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অনেক বিক্রেতাকে জরিমানা করেছেন। মাস্কের বিপুল চাহিদার কারণে দেশে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি ঘোষণার পরপর ৫ টাকা দামের সার্জিকাল মাস্ক ৩০-৪০ টাকায়, আবার ৩০ টাকা মূল্যের এন৯৫ দেড়শ থেকে দুইশ টাকায় বিক্রি হয়। এখনো বেশ কিছু স্থানে উচ্চমূল্যে মাস্ক বিক্রি করছে অসাধু বিক্রেতারা। এ ছাড়া ১০ টাকার কাপড়ের মাস্ক ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে পরিচিত জীবাণুনাশক হ্যান্ড র‌্যাব হ্যাক্সিসল পাওয়া যাচ্ছে না। এর পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে স্যাভলন ও ডেটলের মতো জীবাণুনাশক পণ্যেরও সংকট রয়েছে। ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, হ্যাক্সিসলের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় পণ্যটির সংকট তৈরি হয়েছে। আবার ফার্মেসিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হলেও অতিরিক্ত চাহিদার কারণে মুহূর্তের মধ্যে এই পণ্যটিও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর