মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

উৎকোচের স্বীকৃতি দিয়েই চাকরি

ওসমানী মেডিকেলে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের কাছে জিম্মি রোগীরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

চাকরি দেওয়ার সময় বলে দেওয়া হয় ‘যত পার কামাই কর। বেতনের হিসাব নিতে এসো না।’ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ‘উৎকোচ’ নেওয়ার এমন স্বীকৃতি দিয়েই দেওয়া হয় নিয়োগ। আর নিয়োগ পেয়েই কর্মীরা হাসপাতালজুড়ে শুরু করেন রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায়। রোগীদের ওষুধ, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির অভিযোগ রয়েছে এসব কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মচারীদের দায় নিতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন ‘সানমুন সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ১৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের কার্যাদেশ পায় ‘সানমুন সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলেও আদালতের রায়ের কাজ চালিয়ে আসে। সম্প্রতি আবারও উচ্চ আদালতের আদেশে সানমুনের চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। ফলে আবারও নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে এই সিকিউরিটি কোম্পানিটি। নতুনদের নিয়োগ ও পুরনোদের কাছ থেকে নবায়নের নামে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তারা প্রত্যেক কর্মচারীকে চার হাজার ৮০০ টাকা মাসিক বেতন দেওয়ার কথা। কিন্তু চুক্তির শুরু থেকে তারা আউটডোরে কর্মরতদের দেড় হাজার ও ইনডোরের কর্মীদের এক হাজার টাকা করে বেতন দিচ্ছে। বাকি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী কোম্পানির লোকজন।

এদিকে, বেতন না পাওয়ায় এসব কর্মচারীরা হাসপাতালে অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেছেন। হাসপাতালে ট্রলি ব্যবহার, ওয়ার্ডে প্রবেশ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ কোনো কিছুই হয় না টাকা ছাড়া। এ ছাড়া রোগীর ওষুধ, দর্শনার্থীদের মোবাইল চুরি, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত তারা।

এদিকে, নিয়োগের সময় টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও ৫ হাজার ২০০ টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে, সানমুন সিকিউরিটির পরিচালক মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির সুপারিশে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সুপারিশকারী টাকা নিলে তার জানা নেই। কোম্পানির পক্ষ থেকে শুধু ইউনিফর্ম তৈরির জন্য ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ৪ হাজার ৮০০ টাকার জায়গায় কেন এক হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয় এমন প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি ইউনুছ মিয়ার কাছ থেকে।

সানমুন সিকিউরিটির অপর পরিচালক আবদুল খালিক লাভলুর ফার্মেসিতেই নেওয়া হচ্ছে নিয়োগ আবেদন। কয়েকজন নিয়োগপ্রত্যাশী জানান, ওই ফার্মেসিতেই তারা ৫ হাজার ২০০ টাকা করে জমা দিয়েছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে লাভলু বলেন, তিনি শুধু আবেদনপত্রগুলো দেখে দিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর