রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

হাতে লেখা ‘ফেস্টুন’ নিয়ে গ্রামে গ্রামে চবি ছাত্র

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

হাতে লেখা ‘ফেস্টুন’ নিয়ে গ্রামে গ্রামে চবি ছাত্র

মহামারী করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ^বাসী। সরকারসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যার যার অবস্থান থেকে সচেতনতামূলক কর্মকা-  নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। অনেকেই কাজ করছেন মানবিক উদ্যোগ নিয়েও। সেই ধারাবাহিকতায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল ওয়াহেদ। বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে হাতের লেখা ‘ফেস্টুন’ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন তিনি। প্রচারণায় তার বাহন সাইকেল। এ সাইকেলের সামনে ও পেছনে ফেস্টুন সাঁটানো। আর এ ফেস্টুনে লেখা আছে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে সচেতনতার কথা। কথা হলে চবি ছাত্র আবদুল ওয়াহেদ বলেন, করোনায় বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। একই সঙ্গে ছুটি হয়েছে শহুরে টিউশনিগুলোও। বাড়িতে গিয়ে দেখলেন মানুষের মাঝে নেই কোনো সচেতনতা। মানুষ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিয়ে নেই কোনো মাথাব্যথা। এ অবস্থায় জন্মভূমি বাঁশখালীতে নেমে আসতে পারে ভয়ানক পরিস্থিতি। নাড়া দেয় তার বিবেককে। তাই প্রথম কয়েকদিন শখের সাইকেলটা নিয়ে হাতে ফেস্টুনে সচেতনতার কথা লিখে নেমে পড়েন। প্রথম কয়েকদিন মানুষ ভালোভাবে নিলেও এলাকার গুটিকয়েক উপহাস করেছেন। তারপরও থামেননি। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটেছেন এ তরুণ। যেখানে মানুষ পেয়েছেন, বুঝিয়েছেন করোনা থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। টিউশনের টাকা দিয়ে আবদুল ওয়াহেদ সাবান কিনে এলাকায় কয়েকটি জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি ফেস্টুনে লিখেছেন- সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধৌত করুন, মাস্ক ব্যবহার করুন, জনসমাগম এড়িয়ে চলুন, কাঁশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন, বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাবেন না, হাত মেলানো ও কোলাকুলি করবেন না, প্লিজ সতর্ক হোন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না।

তিনি জানান, ২৩ মার্চ থেকে শুরু করেছি জনসচেতনতামূলক এ উদ্যোগ। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্ধ্যালয় বন্ধ। এ সময় বিশে^র এত বড় রোগ। দরকার জনসচেতনতা। কিছু করতেই হবে। এমন বিশ^াস নিয়েই ২৩ মার্চ প্রথম দিন শুরু করেছি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারণা। সকালে ফজর নামায় পড়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরেছি। বাইসাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে হাতের লেখা ফেস্টুন নিয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছি ধারাবাহিকভাবে। ওয়াহেদ এ প্রতিবেদককে আরও বলেন, চবিতে পড়াশোনা করলেও উঠে এসেছি গ্রাম থেকেই। আমি সচেতন, আমার আশপাশ সচেতন না, তাহলে সচেতনতার গুরুত্ব কোথায়? কৃষক, শ্রমিকের টাকায় পড়াশোনা করি, সেই দায়বদ্ধতা থেকে এলাকার মানুষদের সচেতনতায় নেমেছি। মানুষ আমাকে দেখে অবাক হয়ে দেখে, অনেকে হাসে, তারপরও তারা পড়ছে। হয়তো বাসায় গিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, সচেতন হতে আগ্রহী হবে। আমি চাই মানুষ সচেতন হোক, করোনাকে মোকাবিলা করুক। কথা বলে জানলাম, অনেকেই এ রোগের বিস্তার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের এমন উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন বেশ।

সর্বশেষ খবর