শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

অবহেলিতই রয়ে গেল রাজশাহী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

অবহেলিতই রয়ে গেল রাজশাহী

রাজশাহীতে শ্রমিকদের সেই দৌড়ঝাঁপ আর নেই। যারা আছেন, তারাও অনেকটা অসহায়। কারখানার চাকা মোটামুটি ঘুরলেও বেতন নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা পোহাতে হয়। বেশির ভাগ শ্রমিক এখন নিজেদের জড়িয়েছেন অন্য পেশায়। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও রাজশাহীতে সরকারি কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। বেসরকারিভাবেও এখানে শিল্পায়নের তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিল্পায়নের দিক থেকে রাজশাহী অঞ্চল এখনো অবহেলায় রয়ে গেছে। এতে বেড়েছে বেকার সমস্যা। রাজশাহীর বৃহৎ চারটি শিল্প প্রতিষ্ঠান রেশম কারখানা, চিনিকল, পাটকল ও টেক্সটাইল মিল গড়ে ওঠে স্বাধীনতার আগে। লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের এখন আংশিক চলছে ভাড়াভিত্তিক। লোকসানের বোঝা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহী চিনিকল ও পাটকল। এ অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে রাজশাহীর শিল্পায়ন। বিগত জোট সরকারের সময় আধুনিক মেশিনপত্র থাকার পরও বন্ধ করে       দেওয়া হয়েছিল রাজশাহীর কল-কারখানাগুলো। আধুনিক নতুন মেশিনপত্র কেনার পর ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজশাহী রেশম কারখানা। এরপর থেকেই পড়ে আছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা নতুন মেশিনগুলো। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও হালে সেটির ৬টি লুম চালু হয়েছে। আলোর মুখ দেখেনি ১৯৯৮ সালে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ একর জমির ওপর রেশম বোর্ডের আওতাধীন রেশম পল্লী বাস্তবায়ন প্রকল্প। একনেকে অনুমোদন হলেও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বছর সরকারিভাবে ৬টি লুম চালু করা হয়েছে। রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশাহ জানান, বিপুল টাকা ব্যয় করে রেশম কারখানার জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হলো। কারখানাটি চালু না করে মেশিন ফেলে রাখা হয়েছে। এর দায় কে নেবে? তিনি বলেন, ‘সেই যন্ত্রপাতিগুলো এখন ব্যবহার করে রেশম কারখানাটি চালু রাখা হয়েছে। তবে সেটি পুরোপুরি চালু করা যায়নি।’ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে রাজশাহী বিসিক শিল্প এলাকায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় শতাধিক রেশম ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানা এখন বন্ধ হয়ে আছে। বর্তমানে বেসরকারিভাবে চালু আছে মাত্র আটটি কারখানা। আর লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহী চিনিকল। স্বাধীনতার আগে গড়ে ওঠা এ সরকারি মিলটি এখন লোকসানের খাতায়। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় চালু হতে পারছে না রাজশাহী পাটকলের দ্বিতীয় ইউনিট। অর্থ সংকট দূর করে দ্রæত তা চালুর দাবি জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। রাজশাহী পাটকলের শক্তি বাড়ানোর জন্য বিজেএমসি দ্বিতীয় ইউনিট চালুর কথা বারবার বলে আসছিল অনেক দিন ধরেই। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন নিয়ে আন্দোলনে নামেন। রাজশাহী পাটকল সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ১১ মার্চ রাজশাহী পাটকলের কলেবর বাড়ানোর জন্য দ্বিতীয় ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেয় এবং ভবন নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করা হয়। ভবনের দেয়ালও নির্মিত হয়। ওই সময় আদমজী পাটকলের তাঁত ও মেশিন আনা হয় রাজশাহী পাটকলের দ্বিতীয় ইউনিট চালুর জন্য। দীর্ঘদিন অযতেœ পড়ে থাকার পর তাঁত মেশিন বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় বিএমটিএফকে। তারা কিছু তাঁত মেশিন বসানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দক্ষ লোকবলের অভাবে শেষ পর্যন্ত অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। পাটকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, মিলের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বরাবরই ঊর্ধ্বতন মহল বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। এ কারণে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে দেরি হচ্ছে। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পেলে এ পাটকলকে লাভজনক কারখানায় পরিণত করা সম্ভব হবে। জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী জানান, স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত রাজশাহীতে কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হয়নি। বরং সরকারি নীতির কারণে চালু কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হতে চলেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো চালু আছে, সেগুলোর বিষয়ে দ্রæত পদক্ষেপ নিয়ে রক্ষা করার দাবি জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর