রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

‘এই দুঃসময়ে কেন আমাদের এমপিদের দেখতে পাই না!’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

নির্বাচনের আগে কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে ভোট অর্জনে পারঙ্গম ময়মনসিংহের ১১ এমপি তাদের আসন এলাকার মানুষের দুর্দিনে কোথায়? তারা এখন কভিড-১৯’র সংক্রমণ আতঙ্কে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী। গুজবে, আতঙ্কে, খাবারের সন্ধানে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো যখন দিশেহারা তখনো জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সংসদ সদস্যদের কোনো সামাজিক কর্মযজ্ঞ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অনলাইন দুনিয়াতেও সরব নেই তারা। উল্টো ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে তাদের অনুসারী নেতাদেরও ঘরে থাকতে বলছেন। ফলে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ঘরে বন্দী বেকার, দুস্থ ও অসহায় মানুষরা হিসাব কষছেন কাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। প্রশ্ন রাখছেন করোনায় কোথায় আমাদের জনপ্রতিনিধিরা? এই দুঃসময়ে কেন আমাদের এমপিদের দেখি না! অনেকেই অলস সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নেতাদের নিয়ে বিদ্রুপ করছেন।  জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি বলেন, ‘এই ক্রান্তিকালীন সময়েও সপ্তাহে দুদিন ময়মনসিংহে থেকেছি। বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলেছি। তবে লম্বা সময় ধরে খেটে খাওয়া মানুষদের যেহেতু উপার্জন নেই তাই জনপ্রতিনিধিদের এখন মাঠে থাকা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’ তবে একেবারে শেষ মুহুর্তে সরকারের ত্রাণ পেয়ে দুয়ারের বাইরে এসে সাধারণের আঙ্গিনায় গিয়েছেন তিন এমপি। সোমবার হালুয়াঘাটের ধারা বাজারে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট) আসনের এমপি জুয়েল আরেং গত ২৯ মার্চ ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের এমপি অ্যাড. নাজিম উদ্দিন আহমেদকে দেখা মিলেছে করোনার সুরক্ষা সামগ্রী ও দিন মজুরদের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায়। অবশ্য গত শুক্রবার ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের এমপি হাফেজ মাও. রুহুল আমীন মাদানী করোনা প্রতিরোধের বিভিন্ন উপকরণ বিলি করেন স্থানীয়দের মাঝে। আর গত শুক্রবার মুক্তাগাছায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের পক্ষে ত্রাণসামগ্রী বিলি করেন মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ। অপরদিকে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল নিজের ফেসবুক ওয়ালে গত ২৩ তারিখ লাইভে এসে সাত মিনিটের বিভিন্ন সচেতনতামূলক দিক নির্দেশনা দেন। নিজের টাইমলাইনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেও নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর বাকি এমপিরা নিজ এলাকায় আছে কিনা সে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোটাররা।

জানতে চাইলে ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল বলেন, ‘এলাকায় গেলে জনসমাগম ঠেকানো সম্ভব নয়। জন দুরত্ব নিশ্চিত করতেই আমি এলাকার বাইরে। তবে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে একটি মানুষও যেন অনাহারে না থাকে। আর আমি অনলাইনে সবসময়ই এক্টিভ আছি।’

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের এমপি বেগম রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের এমপি এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের এমপি অ্যাড. মোসলেম উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম, ময়মনসিংহ ১০ (গফরগাঁও) এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলসহ এলাকায় নেই কেউই। ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন তুহিন নিজ এলাকায় থাকলেও অনেকটাই গৃহবন্দী। আর ভালুকা আসনের এমপি কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু আছেন হোম কোয়ান্টারাইনে।

এমন প্রেক্ষাপটে অনেকটা বিদ্রুপ করেই সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপির নির্বাচনী এলাকার একজন ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘করোনা নিয়া মুক্তাগাছাসহ দেশের অনেক এলাকাতেই বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতা মহোদয়গণের উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ এ যাবত  চোখে পড়েনি। ‘শুনলাম চাল আর কি কি যেন সাহায্য আসিতেছে! এখনো কি তাহাদের বসিয়া থাকা ঠিক হইবে?’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর