রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

খুলনায় ক্ষুধার্ত মানুষ ছুটছে দ্বারে দ্বারে

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা। খুলনা সার্কিট হাউজ গেটের কাছেই শতাধিক মানুষের জটলা। চৈত্রের খরতাপ মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা খাদ্য সহায়তা পেতে অপেক্ষা করছেন। করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া নগরীর চর রূপসা, ৫নং মাছ ঘাট, গ্রীন লাইন বস্তি ও আনছার ক্যাম্প বস্তির এসব মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। বেলা সাড়ে ১২টায় তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয় এখান থেকে কোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও জায়গা ছেড়ে নড়তে চায় না অভাবী মানুষগুলো। চোখে-মুখে স্পষ্ট অসহায়ত্বের ছাপ। বাড়ি ফিরবেন কীভাবে, যেখানে ছেলে-মেয়ে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা চাল-ডালের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিন বছরের নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নগরীর ঘাট এলাকার বয়োবৃদ্ধ হোসনে আরা। বললেন, ‘সংসারে খাটনি করার মতো কেউ নাই। আমরা অসহায় আমাগো ম্যালা কষ্ট। এতিম বাচ্চা- ভাতের কষ্টে কোনো কথা হুনতে চায় না। সেই জন্য রাস্তায় নামছি, সাহায্য নিতে আসছি।’ জানা যায়, খুলনার ছোট-বড় কয়েক শ বস্তিতে প্রায় দুই লাখ নিম্নআয়ের মানুষ বসবাস করে। এদের অধিকাংশই হতদরিদ্র রিক্সা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, হকার, রাজমিস্ত্রি, সবজি বিক্রেতা, দোকানদার। করোনার কারণে তাদের দৈনিক আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের ঘরেই চাল-ডাল প্রায় শেষ। এখন দিন কীভাবে কাটবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই ‘দিন আনে দিন খায়’ এসব শ্রমিকের।

তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে কর্মহীন এসব মানুষকে খাদ্য সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, জনসমাগম এড়াতে তালিকা করে রাতের বেলায় বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে সাহায্যের তুলনায় হতদরিদ্রের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সংকট দিনদিন জটিল হচ্ছে।

এদিকে একই অবস্থা কর্মহীন রূপসার বিভিন্ন মাছ কোম্পানির প্রায় ৫ হাজার চিংড়ি শ্রমিকের। এমন দুর্দিনে তাদের পাশে নেই মালিকপক্ষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর