সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

পুরোদমে চলছে রূপপুর প্রকল্পের কাজ

পাবনা প্রতিনিধি

পুরোদমে চলছে রূপপুর প্রকল্পের কাজ

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনার মহামারী ছোবলের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে পূর্ণোদ্যমে চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্প থেকে সময়মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বহির্বিশ্বের আটটি দেশের প্রায় তিন হাজার মানুষ নিরলস কাজ করে চলেছেন। সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশিরাও।প্রকল্পের পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দেশের অগ্রাধিকারভুক্ত একটি প্রকল্প। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আগের মতো পূর্ণোদ্যমে চলমান। করোনাভাইরাস যাতে এ প্রকল্পের কাজে কোনো বাধা হতে না পারে সে জন্য সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রকল্প সাইটের সব প্রবেশ পয়েন্টসহ অফিস ভবন এবং ক্যান্টিনে প্রবেশকালে কর্মীদের তাপমাত্রা স্ক্যান করা হচ্ছে। সাইটের সব জায়গায় প্রতিদিনই পরিচালিত হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। দেশি-বিদেশি সব কর্মীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন সরবরাহ করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সব ধরনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, প্রকল্পের প্রবেশপথে একটি মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের নিজস্ব চিকিৎসক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন প্রকল্পে কর্মরত সবার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে বিদেশিদের হোম কোয়ারেন্টাইন পূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়ার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় দেশে প্রথম নির্মিত এই প্রকল্পে ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। ফলে করোনা সতর্কতা অবলম্বন করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এদিকে রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত যেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যথাসম্ভব বেশিসংখ্যক লোককে দূর থেকে কাজ করার সুযোগ প্রদান, প্রচুর পরিমাণে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ও হাইজিন পণ্য সংগ্রহ এবং কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল। এ ছাড়া সব স্থাপনা ও যানবাহনে অব্যাহতভাবে জীবাণুমুক্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। লিখাচোভ বলেন, করোনা সংকটকালেও বিদেশে নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের নির্দেশনা বিশেষভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। রসাটমের বিবৃতিতে বলা হয়, রূপপুর প্রকল্পে সম্প্রতি যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের প্রকল্প সাইটে প্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ধরনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালনের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থাসহ জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।

গ্রিন সিটি থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রুশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। যারা বিদেশ থেকে প্রকল্প এলাকায় আসছেন, তাদের বিশেষ বাসে করে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাবশ্যক কাজে জড়িত নয়, এমন বাংলাদেশিদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ১৭৭ জন বিদেশি নাগরিককে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেলারুশের এক নাগরিকের গলাব্যথা ও জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। প্রকল্পের কর্মরত চিকিৎসক ডা. সের্গেই মারজভস জানান, তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। এর আগে ওই ব্যক্তির গলায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এ কারণে তার গলাব্যথা হতে পারে বলে ধারণা ছিল তার। এর পরও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারিতে তাকে করোনা পরীক্ষার জন্য ২৬ মার্চ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আ ফ ম আসমা খাতুন জানান, পরীক্ষায় বেলারুশের ওই ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়া, চীন, ইরান, ভারত, বেলারুশসহ আটটি দেশের প্রায় ৩ হাজার বিদেশি নাগরিক কর্মরত। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরাও।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর