শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ৮শ বন্দী মুক্তির অপেক্ষায়

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ৮শ বন্দী মুক্তির অপেক্ষায়

করোনাভাইরাস নিয়ে সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারেও বন্দীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। নতুন আগত আসামিরা কারাগারের ভিতরে নিরাপত্তা ও সচেতনতায় প্রবেশের সময় হ্যান্ডওয়াশ, মাস্ক, প্রচার-প্রচালনা, মাইকিং, নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবে করোনার কারণে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাজতি-কয়েদিসহ প্রায় ৩০০ আসামিকে জামিন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছুই যাচাই-বাছাই করে নির্দেশনা পেলেই এসব জামিনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে কারাগার সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম কারাগারের বিভিন্ন ক্যাটাগরির কয়েদি-হাজতি মিলে পৃথকভাবে ঢাকায় তালিকাও পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা আতঙ্ক কাটাতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। যাদের অপরাধ লঘু এবং যারা ৬ মাস ধরে সাজা ছাড়াই কারাগারে হাজতবাস করছেন, এমন তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ছিনতাইয়ের চেষ্টা, চুরি, হত্যাচেষ্টা ও প্রতারণা- এসব অপরাধে অপরাধীদের তালিকাও করা হয়েছে। তবে গুরুতর অপরাধী যেমন- হত্যা, মাদক, ধর্ষণ ও ছিনতাইয়ের আসামিদের তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যাচাই-বাছাই করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া করোনাসচেতনতায় প্রচার-প্রচারণাসহ নানাবিধ উপকরণ দেওয়া হয়েছে আসামিদের মাঝে।  চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস (কভিট-১৯) সারা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কে ফেলেছে। সেই আতঙ্ক দেশের কারাগারে থাকা বন্দীদের মধ্যেও বিরাজ করছে। তার ওপর চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক বন্দী থাকার বিষয়টি আরও বেশি সমস্যায় ফেলে দিয়েছে কারা কর্মকর্তাদের। তাই বন্দীদের করোনা আতঙ্ক কাটাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ বিশেষ জামিনের উদ্যোগ নিয়েছে। লঘু অপরাধে দীর্ঘদিন ধরে হাজতবাস করছেন, প্রথম ধাপে এমন বন্দীদের জামিন দেওয়া হবে। ফলে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে প্রায় তিন শতাধিকের মতো বন্দী জামিন পেতে পারেন। তাছাড়া কয়েদি-হাজতি পৃথকভাবে পাঠানো তালিকায় হাজতি ১৫১ জন এবং কয়েদি ১৭০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম কারাগারে কয়েদি বন্দী রয়েছে- সাজার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬ মাস অবশিষ্ট আছে এমন কয়েদি বন্দী হচ্ছে ৮৬ জন, লঘু অপরাধে আটক কয়েদি বন্দী ৫২ জন, কারাবিধি প্রথম খে র ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী মুক্তিযোগ্য কয়েদি ৫৪ জন, অচল ও অক্ষম এবং গুরুতর দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত কয়েদি ৪ জন, সর্বোচ্চ এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ১০৬ এবং সর্বোচ্চ ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ৪৭ জন।

রাজশাহীর ৫০০ বন্দীকে মুক্তির সুপারিশ : নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী কাজী শাহেদ জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর ধারণক্ষমতা এক হাজার ৪৫০ জন। কিন্তু সব সময় এখানে অন্তত সাড়ে তিন হাজার বন্দী থাকে। অতিরিক্ত বন্দী নিয়ে এখানে আছে নানারকম সমস্যাও। এর মধ্যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঝুঁকিও বাড়ছে। সে জন্য বন্দীদের যদি মুক্তি দেওয়া হয় তাহলে রাজশাহী কারাগার থেকেও মুক্তি দেওয়া হবে। তবে কতজন মুক্তি পাবেন তা এখন বলা সম্ভব না হলেও ৫০০ জনের তালিকা সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এখানকার কর্মকর্তারা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কারাগারের বন্দীদেরও ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা লঘু অপরাধের মামলায় বন্দী আছেন তাদের মুক্তির ব্যাপারে ভাবছে সরকার। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষও এখানকার প্রায় ৫০০ বন্দীর মুক্তির জন্য সুপারিশ করেছে। কয়েকদিন আগে কারা অধিদফতরে তালিকাটি পাঠানো হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তালিকার বেশির ভাগই সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। কারও কারও সাজার মেয়াদ শেষ। তালিকায় বিচারাধীন মামলার মাত্র ১৬ জন হাজতি আছেন। লঘু অপরাধের মামলায় দীর্ঘদিন ধরেই তারা বন্দী। সিনিয়র জেল সুপার জানান, ৩০ বছর কারাদণ্ডকে যাবজ্জীবন সাজা ধরা হয়। কারাগারে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়লে ২২ বছরের মতো বন্দী থাকলে যাবজ্জীবন সাজা খাটা শেষ হয়ে যায়। রাজশাহী কারাগারে ১২৮ জন বন্দী আছেন যাদের সাজার মেয়াদ শেষ অথবা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দী আছেন। মুক্তির জন্য তালিকায় তাদের নাম উঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, লঘু অপরাধে যারা দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন এমন আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে হত্যা, ধর্ষণ ও অ্যাসিড মামলার আসামি ছাড়া ছোটখাটো অপরাধে যারা দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন এমন কয়েদিদের কীভাবে মুক্তি দেওয়া যায় সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালাও তৈরি করছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার বলেন, যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে বড় কোনো বাধা নেই। তবে হত্যা ও ধর্ষণ মামলার যেসব আসামির সাজা খাটা শেষ হয়নি তাদের হয়তো মুক্তি মিলবে না।

যদিও তালিকায় এমন কিছু নামও আছে। তাদের বিষয়টি সরকারই বিবেচনা করবে। তিনি জানান, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রায় ৫০০ বন্দীর নাম তারা কারা অধিদফতরে পাঠিয়েছেন। লঘু অপরাধের কয়েদিদের মধ্যে ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের আলাদাভাবে তালিকা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদেরও নাম আছে আলাদা। আর যে ১৬ জন হাজতির নাম আছে তারা ছোটখাটো মামলার আসামি। এরা ৫১ ও ৫৪ ধারায় গ্রেফতার। রাজশাহী মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিও আছেন তালিকায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দী তার সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে এবং সেই বন্দীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাকে মুক্তি দিতে পারে। এ জন্য রাষ্ট্রপতির কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। তবে তালিকা খতিয়ে দেখার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে বন্দীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর