সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

এমপিদের চাপে আওয়ামী লীগের কমিটিতে বিতর্কিতরা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

হাইব্রিড, অসুস্থ, আত্মীয়, নিষ্ক্রিয় আর সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হচ্ছে। নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন ত্যাগী আর দলের দুঃসময়ের অন্তত ৪০ জন নেতা। অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেওয়া নতুন কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিলেন না। এমপিদের চাপে কমিটিতে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, কমিটিতে স্বাক্ষর করতে একজন প্রভাবশালী এমপি তার লোকজন দিয়ে তাকে (মেরাজ মোল্লা) আটকে পর্যন্ত রেখেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনের চাপে তাকে এই কমিটিতে স্বাক্ষর করতে হয়েছে। মেরাজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, ছাত্রশিবিরের হামলায় তুহিন নামে একজন কর্মী বিশ^বিদ্যালয়ে রাজনীতি করার সময় হাতের চারটি আঙ্গুল হারিয়েছেন। তাকে সদস্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেটি পর্যন্ত করতে দেননি এমপিরা। অথচ শিবির, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি করা লোকজন এই কমিটিতে আছেন। এমপিরা পছন্দ করে তাদের নাম দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগে বিএনপি করেছে, তাও মানা যায়, কিন্তু শিবির করা ব্যক্তি আওয়ামী লীগের কমিটিতে। এই দুঃখ কোথায় রাখব।’ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। এতে সভাপতি হন রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারাকে।

এ ছাড়া বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়।

মার্চে সভাপতি ও সম্পাদক কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেন। এর একটি কপি পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ৭৫ সদস্যের হলেও তালিকায় আছেন ৭৪ জন। সদস্য একজন কম করা হয়েছে। তালিকায় আগের কমিটির অন্তত ৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আংশিক কমিটির নেতাদের নিজ নিজ এলাকার নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

আগের কমিটি থেকে বাদ পড়া প্রায় ৪০ নেতার মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য একেএম আতাউর রহমান খান, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, বদিউজ্জামান বদি, সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ সরদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠা-ু, পবা উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর রহমান, আগের কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান আক্তার, প্রবীণ নেতা আবদুল বারীর মতো ত্যাগী নেতারা আছেন।

অথচ সরকারি চাকরিজীবী হয়েও কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন মোজাম্মেল হক ও একরামুল হক। অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। আর একরামুল হক পুঠিয়ার বানেশ্বর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ পেতে যাওয়া গোদাগাড়ীর সাবিয়ার রহমান মাস্টার কোনোদিন দলই করেননি। দলে তার কোনো পদও ছিল না। তবে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাকে দলীয়  মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। ফেল করেছেন।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদকের পদ পেতে যাওয়া আলী খাজাও কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেননি। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। রাজশাহী নগরীর ঘোষপাড়া এলাকার মরু হামিদ হত্যামামলার প্রধান আসামি। আদালত তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছিল। আলী খাজা এক সময় সিপিবি করতেন। পরে ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। দফতর সম্পাদক হতে যাওয়া প্রদ্দ্যুত কুমার সরকার দারার ঘনিষ্ঠ। তিনি কখনো আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতে ছিলেন না। দুর্গাপুরের নওপাড়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক প্রদ্দ্যুত দলে হাইব্রিড। সদস্য হিসেবে পদ পেতে যাওয়া নীলিমা বেগমের রাজনৈতিক পরিচিতি হিসেবে লেখা হয়েছে তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। অথচ দলীয় নেতারা বলছেন, নীলিমা বেগম কখনই মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ছিলেন না।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে যাওয়া খাদেমুন নবী চৌধুরী আগে বিএনপি করতেন। শ্রম সম্পাদক হতে যাওয়া আসলাম আলীর নামের পাশে রাজনৈতিক পরিচিত হিসেবে লেখা হয়েছে পুঠিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের নেতা। অথচ এ নামে শ্রমিক লীগের কোনো নেতাকে চিনতেই পারছেন না দলীয় নেতারা। জিয়াউদ্দিন টিপু ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের নেতা। উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পেতে যাওয়া মো. বাক্কারের রাজনৈতিক পরিচিত হিসেবে লেখা হয়েছে পবা থানা আওয়ামী লীগের নেতা। অথচ তিনিও কোনো পদ-পদবিতে ছিলেন না।

সর্বশেষ খবর