করোনার প্রকোপে দেশ যখন উদ্বেগ-আকুলতায়, সেই সময়ে রংপুর সিটি করপোরেশনে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে রাজনীতি করছেন কাউন্সিলররা। সিটি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর এলাকায় ত্রাণ যায় না বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচিত কাউন্সিলর তার নিজ এলাকায় এবং তার পছন্দের লোকজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ সীমাবদ্ধ রেখেছেন। ফলে অনেক স্থানে ত্রাণবঞ্চিতরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের আশ্রয় নিচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি নির্বাচনে ৩ শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ৩৩টি ওয়ার্ডে ৩৩ জন কাউন্সিলর এবং ১১ জন সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর হতে চললেও রাজনৈতিক বিরোধিতার জের এখনো রয়ে গেছে। দেশব্যাপী মহামারী করোনা ছোবল দিয়েছে। এ দুর্যোগের হাত থেকে সাধারণ কর্মহীন মানুষের পাশে বেসরকারি পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীনদের ত্রাণ বিতরণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, কাউন্সিলররা বিগত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের এলাকায় ত্রাণ না দিয়ে পছন্দের লোক ও নিজ এলাকায় ত্রাণ দিচ্ছেন। ফলে মোট জনগোষ্ঠীর বিরাট একটি অংশ রাজনৈতিক কারণে ত্রাণ পাচ্ছে না।
এতে পরাজিত অনেক প্রার্থী ক্ষুব্ধ। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিগত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গির আলম তোতা বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তার নিজ এলাকায় এবং নিজের পছন্দের লোকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন। আমি আমার এলাকার কিছু কর্মহীন মানুষের তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সে তালিকার কাউকে ত্রাণ দেওয়া হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী কবির আহম্মেদ বলেন, ‘আমার এলাকায় লোকজন কাউন্সিলরের কোনো ত্রাণ পাননি। আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বেসরকারি পর্যায়ে আমাদের এলাকায় কিছু ত্রাণ দিয়েছি।’এ ধরনের চিত্র রংপুর নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডের। বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এলাকায় কোনো ত্রাণ পৌঁছুচ্ছে না। ফলে কর্মহীন ও দুস্থদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে মঙ্গলবার রংপুর নগরের লালবাগ রেলওয়ে বস্তির হাজার হাজার মানুষের খাদ্যের দাবিতে প্রধান সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে। এ ছাড়া একই দাবিতে তাজহাট মহাসড়কে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বারবার বলার পরও তাদের খাদ্য দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা বিক্ষোভ করছেন।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান জানান, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১৬৫ মেট্রিক টন চালসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, কাউন্সিলররা নিজ এলাকায় ত্রাণ দিতে বেশি পছন্দ করছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।