রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ধান কাটা-মাড়াইয়ে যন্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা

করোনার প্রভাবে শ্রমিক সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে সারা দেশে চলছে সাধারণ ছুটি। এ অবস্থায় হাওরাঞ্চলে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। আবার সামনের মাসের প্রথম দিনই শুরু হবে সারা দেশে বোরো ধান কাটার উৎসব। এ অবস্থায় শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় এবং কম সময়ের ব্যবধানে নিরাপদ থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের যন্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। একইভাবে কম্বাইন হারভেস্টার (ধান কাটা, রিপার ও মাড়াই যন্ত্র) সহজলভ্য করতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকার মনে করে, এবার সারা দেশে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু কম সময়ের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই করতে না পারলে সামনে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য সারা দেশের কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ধান কাটার মৌসুমে স্বাভাবিক সময়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রমিকের সংকট থাকে। আবার করোনা পরিস্থিতিতে হাওরাঞ্চলসহ দেশে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। তবে সংকটে আশার আলো হতে পারে কম্বাইন হারভেস্টার। যন্ত্রটির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হেক্টর জমির ধান একই সঙ্গে কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করতে দেড় শর বেশি শ্রমিক এবং প্রায় ৫০ হাজার টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে, ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ১ হেক্টর জমির ধান কাটতে লাগবে ১৮ জন শ্রমিক। এ পরিমাণ ধান প্রথাগতভাবে কাটতে ৬১ জন শ্রমিক লাগবে। এক দিনে ইয়ানমার হারভেস্টারে প্রায় সাড়ে ৩ হেক্টর জমির ধান কাটতে সর্বোচ্চ ৬৩ জন শ্রমিক লাগবে। সেখানে প্রথাগতভাবে লাগবে ন্যূনতম ২১৩ জন শ্রমিক।

 ফলে কম্বাইন হারভেস্টার ১৫০ জন শ্রমিকের সাশ্রয় করবে। আবার হারভেস্টারের মাধ্যমে এখন কাদামাটি ও পড়ে থাকা ধানও কাটা সম্ভব। এর মাধ্যমে শ্রমিক সংকট মোকাবিলা ও কৃষকের খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব বলে জানান দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষিযন্ত্র বিপণনকারী এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। তিনি বলেন, হাওর এলাকা ছাড়াও সারা দেশে জাপানি প্রযুক্তির ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টার সরবরাহ করছি। যন্ত্রটি শ্রমিক ও খরচের সর্বোচ্চ সাশ্রয় করছে বলে কৃষক জানিয়েছেন। বর্তমান শ্রমিক সংকটে অন্যতম ভরসা হিসেবে কৃষকের কাছে হারভেস্টারের চাহিদা বাড়ছে। ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টারে একজন কৃষক ১ ঘণ্টায় ১ একর জমির ধান একই সঙ্গে কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী অনায়াসেই করতে পারেন। এক দিনে হারভেস্টার দিয়ে ১০ একর পর্যন্ত জমির ধান কাটতে খরচ হবে মাত্র ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রথাগতভাবে সেটি করতে খরচ হবে ৭৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ফলে কম্বাইন হারভেস্টারে ১০ একর জমির ধান কাটার মাধ্যমে দিনে সাশ্রয় হবে দেড় শর বেশি শ্রমিক বা প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। তাই যন্ত্রটি সহজলভ্য করতে কৃষককে সার্বক্ষণিক ডেলিভারি ও সার্ভিসিং সুবিধা ছাড়াও অর্থায়ন এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এসিআই।

জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। দেশের মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে বোরো থেকে। এবারে বাম্পার ফলন হলেও জমিতে সোনালি ফসল দেখে কৃষক যতটা না খুশি, এর চেয়ে বেশি চিন্তাগ্রস্ত কীভাবে এ ফসল ঘরে তুলবেন। একদিকে শ্রমিকস্বল্পতা, এর ওপর আবার করোনাভাইরাসের প্রকোপ। তবে আশার কথা, যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে বোরো ধান কাটার শ্রমিকের অভাব থাকা জেলাগুলোয় ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার সরবরাহের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে কৃষক ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকিতে কম্বাইন হারভেস্টার কিরতে পারবে। তবে এটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আবার এখনই তা সরবরাহ না করতে পারলে এটি প্রয়োজনীয়তা হারাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘায়িত হচ্ছে বর্তমানের করোনা পরিস্থিতি। অন্যান্য জেলা বা উপজেলা থেকে আসতে পারছেন না শ্রমিক। অল্পসংখ্যক শ্রমিক মাঠে কাজ করছেন ধান কাটার সময়। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। সরকার যেসব যন্ত্র বরাদ্দ দিয়েছে তা ইতিমধ্যে বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। ফলে এই ধানা কাটা ও মাড়াইয়ে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলা করেই দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর