রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

অবহেলিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা

করোনাভাইরাস

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অবহেলিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জেনারেল হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের (বিআইটিআইডি) আইসোলেশন ওয়ার্ডে। এ দুই সেবাকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা ব্যবস্থার সংকট এবং খাবার না পাওয়াসহ নানা অভিযোগ করেছেন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে খাবার ও যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হলেও বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সদের তা সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে বিআইটিআইডির আইসোলেশন ইউনিটে ১১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে তিনজন করোনা আক্রান্ত। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ২৪ জন। জানা যায়, বর্তমানে বিআইটিআইডির আইসোলেশন ইউনিটে তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন নার্সরা। প্রতি শিফটে দুজন করে ছয়জন নার্স ও একজন করে তিনজন ক্লিনার কাজ করছেন। একটি টিম কাজ করবেন সাত দিন। কিন্তু ওয়ার্ডে নেই পর্যাপ্ত এন-৯৫ মাস্ক। এক শিফটে একজন চিকিৎসক, দুজন নার্স ও একজন ক্লিনার থাকলেও এন-৯৫ মাস্ক দেওয়া হয়েছে একটি। পিপিই দেওয়া হলেও এন-৯৫ মাস্কের বদলে দেওয়া হয়েছে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক। বিআইটিআইডির সিনিয়র স্টাফ নার্স তানজিমা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা, খাবারের সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়েই আমরা দায়িত্ব পালন করছি। ফলে প্রতিনিয়তই আমরা ঝুঁকিতে থাকি। কিন্তু আমরা সুস্থ থাকলেই তো ওয়ার্ডের রোগীদের সেবা দিতে পারব। এমনটি হলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।’  

বিআইটিআইডির পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালটি নতুনভাবে যাত্রা করেছে। এখনো অনেক কিছুর সংকট রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে গুছিয়ে আনতে হয়তো একটু সময় লাগছে। পর্যায়ক্রমে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। করোনা রোগীদের সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের ডাইনিংয়ে নিজেদের খরচে খাবার খাবে, পরে তা হাসপাতাল থেকে প্রদান করা হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’   

অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে খাবারের সংকট না থাকলেও দেওয়া হয়নি অতিজরুরি এন-৯৫ মাস্ক। কাজ করতে হচ্ছে সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে। প্রতিদিন তিন শিফটে দুজন করে মোট ৬ জন নার্স সাত দিন দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে যাবেন। নাম প্রকাশ না করে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘আমাদের এন-৯৫ মাস্ক খুব বেশি জরুরি। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। পিপিই ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। তবুও আমরা শঙ্কায় আছি।’

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনামূল্যে খাবার ও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া সাত দিন দায়িত্ব পালন শেষে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীর সব ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করার কথা। তবে কেউ কেউ তা করছে না বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর