বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

জনস্বার্থে এন-৯৫ মাস্ক এনেছি এগুলো আনা কঠিন কিছু নয়

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

জনস্বার্থে এন-৯৫ মাস্ক এনেছি এগুলো আনা কঠিন কিছু নয়

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নিম্নমানের এন-৯৫ মাস্ক সংগ্রহ করে তুমুল সমালোচনায় পড়েছে। কিন্তু গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম চীন থেকে এন-৯৫ মাস্কসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে এসেছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তিনি চীন থেকে নিয়ে এসেছেন পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, থার্মোমিটার ও দ্রুত শনাক্তকরণ কিট। এসব সামগ্রী সংগ্রহে তার উদ্যোগ ও তৎপরতার বিষয় নিয়ে সিটি মেয়র মঙ্গলবার কথা বলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও উদ্যোগে জনস্বার্থে এসব সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ করেছি। স্বাস্থ্য অধিদফতর যেটা বলছে, সেটা আইনের ব্যাপার। সরকারি নিয়ম মেনে দীর্ঘ অপেক্ষা করার সময় এখন নয়। গাজীপুরের মেয়র বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিট, পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, থার্মোমিটার এগুলো আনা শুরু করেছি। সর্বশেষ ২০ হাজার এন-৯৫ মাস্ক এনেছি। আগেও ১৮-২০ হাজারেরও মতো এনেছি। পিপিই যেটা চীনের  চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন, চার বারে সেটা প্রায় ৪০ হাজারের মতো এনেছি। এর মধ্যে শেষবার এনেছি প্রায় সাত-আট হাজার। ডিজিটাল থার্মোমিটার এনেছি আট হাজারের মতো। সার্জিক্যাল মাস্ক এনেছি মোট ১০ লাখেরও বেশি। এ ছাড়া দ্রুত শনাক্তকরণ কিট, যেটা দিয়ে ১৫ মিনিটে করোনা পরীক্ষা করা যাবে, সেটা এনেছি ৭০-৮০ হাজারের মতো।

তিনি বলেন, আমার কাছে ৭০-৮০ হাজারের মতো কিট আছে। আমি নিজ উদ্যোগে এগুলো আনিয়েছি। যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন হয় বা অন্যান্য মেডিকেলে কারও প্রয়োজন হয়, নাগরিক সেবার স্বার্থে এগুলো ব্যবহার করবে, তাহলে আমার কাছ থেকে নিতে পারবে। প্রাইভেট মেডিকেলের অনেকে এগুলো নিচ্ছে এবং ফলাফলও পাচ্ছে। এই কিটগুলো দিয়ে ১৫-১৭ মিনিটেই ফলাফল জানা যায়। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চীনের কুনমিং শহরের মেয়র ও আমার সেখানকার বন্ধুরা প্রথম দফায় আনা কিটগুলো আমাকে উপহার হিসেবে দিয়েছে। সবকিছুই চীন থেকে এনেছি। ওখানকার কয়েকটি শহরের মেয়র ও গভর্নর আছে আমার পরিচিত। করোনা পরিস্থিতি দেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ ছাড়া আমার বন্ধুরা রয়েছেন সেখানে, তাদের মাধ্যমে আমি এগুলো এনেছি। সিঙ্গাপুর থেকেও কিছু থার্মোমিটার এনেছি, যেগুলো স্ক্যানারের মতো। সেগুলো বাসা-অফিসের সামনে রাখলে, সেখান দিয়ে কেউ গেলে স্ক্যান করে শরীরের তাপমাত্রা অটোমেটিক উঠে যাবে। তিনি বলেন, চীনের কুনমিং, বেইজিং, গুয়াংজো, সাংহাইসহ কয়েকটি শহরে আমার বন্ধুরা আছে। তাদের বলার পর তারা সংগ্রহ করে এগুলো পাঠায়। তারা মূলত, বিভিন্ন জায়গা থেকে এগুলো সংগ্রহ করে দেয়। এ ছাড়া চীনের কুনমিং শহরের মেয়রও অনেক সহায়তা করছেন।

তরুণ এই সিটি মেয়র বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আমি যেদিন বলেছি, এর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই তারা পাঠাচ্ছেন। অর্থাৎ দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই এগুলো নিয়ে আসা যাচ্ছে। আমার যা লাগবে, আমি পরিমাণ বলেছি। তারা কাছাকাছি পরিমাণই পাঠিয়ে দিয়েছে। এসব সুরক্ষা সামগ্রী পরিবহনের ব্যাপারে সিটি মেয়র বলেন, কার্গো প্লেন ভাড়া করে আনা যায়। আবার যাত্রীবাহী প্লেনেও ভাড়া দিয়ে আনা যায়। আমি দুইভাবেই এনেছি। শেষবার যখন নিয়ে আসি তখন প্লেনে পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। বাকি সিটের ভাড়া আমি দিয়ে এনেছি। এ পর্যন্ত চার বার আনিয়েছি। তিনি বলেন, চীনে এন-৯৫ মাস্ক অতটা অ্যাভেইলেবল নয়। কিন্তু আমি তাদের অনুরোধ করেছি যে, আমাদের যেহেতু বিপদ, সাহায্য করতে হবে। তাই তারা সংগ্রহ করে দিয়েছে। এ ছাড়া অন্য সামগ্রীগুলো পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব সামগ্রীর দাম এখন সেখানে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বিশ্বব্যাপী এন-৯৫ মাস্কের সংকট রয়েছে। তারপরও তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কীভাবে আনতে পারলেন জানতে চাইলে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উনারা কোনভাবে কোন প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করছেন, সেটা আমি বলতে পারব না। উনারা যদি আমার সহযোগিতা চান, যেহেতু দেশে ক্রাইসিস চলছে, আমি যতটুকু চিনি বা জানি সাহায্য করতে পারব। মূল কথা, মানুষকে রক্ষায় যা যা করা দরকার, আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করলে সেগুলো দ্রুত করতে পারব। উনারা কার মাধ্যমে এগুলো আনতে চেষ্টা করছেন জানি না। যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, অবশ্যই বড় কারও মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে। অবশ্যই পাওয়া যাবে। এগুলো আনা তো খুব কঠিন কিছু নয়। সঠিক প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করলে অবশ্যই পাওয়া যাবে।

অনেকে বলছেন এগুলো অনুমোদন ছাড়াই আনা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আমি যদি মেয়র হিসেবে অনুমোদন নিয়ে এগুলো আনতে যাই, তাহলে ছয় মাসের মতো সময় লাগবে। এর মধ্যে যদি এই রোগে আমার এলাকার মানুষ মারা যায়, তাহলে এগুলো এনে কী করব? আইন তো হচ্ছে মানুষের জন্য। মানুষের কথা চিন্তা করে আমি এই উদ্যোগটা নিয়েছি। সিটি করপোরেশন বা সরকারের নয়, নিজের টাকায় মানবিক কারণে চীন থেকে এগুলো আমি সংগ্রহ করেছি। আমাদের হাসপাতাল বা আমাদের আশপাশের হাসপাতালে এগুলো ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, আমাদের গাজীপুর এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালসহ বিভিন্ন জেলা শহরের হাসপাতালকে এগুলো দিয়েছি। তাদের ডাক্তাররা যেন এই ড্রেসটা ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য।

যে কিট এনেছি সেটা চায়নার হাসপাতালে ব্যবহার করেছে। ১৫ থেকে ১৭ মিনিটে এসবে রেজাল্ট আসে। আমি তিন ধাপে প্রায় ৮০ হাজারের মতো নিয়ে এসেছি। এটা যদি কারও প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা ব্যবহার করতে পারবে। মাথার ক্যাপ, চোখের চশমা অর্থাৎ সুরক্ষার জন্য মাথা থেকে পা পর্যন্ত একজন ডাক্তারের যা প্রয়োজন আমরা সবই নিয়ে এসেছি। আমাদের এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে সারা পৃথিবীতে সমালোচনার ঝড় আছে। সেটা আমরা দুই ধাপে চীন থেকে নিয়ে এসেছি। এ পর্যন্ত আমি প্রায় ২৫ দিনে চার বার চারটি বিমানে করে এগুলো এনেছি। দেশের মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে আমি এগুলো নিয়ে এসেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলে আমার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর