বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বৈশাখের বৃষ্টিতে আশীর্বাদ কৃষকের

নজরুল মৃধা, রংপুর

করোনার কারণে পুরো দেশ যখন চিন্তাগ্রস্ত, সে সময় রংপুরে বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহের বৃষ্টি কৃষকদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দিন থেকে হালকা ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির ফলে রংপুর অঞ্চলে বোরো, আউশ, ভুট্টা, পাট ও শাক-সবজিচাষিদের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে। সেচনির্ভর ফসলে বাড়তি খরচ কিছুটা কমায় কৃষকরা অনেকটা খুশি ।

রংপুর আবহওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত অঞ্চল ভেদে বৃষ্টি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিমিটার। তাই বৈশাখের খরায় এ বৃষ্টি আশীর্বাদের পাশাপাশি আর্থিক সাশ্রয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের কাছে। সেচনির্ভর বোরো চাষে কৃষকরা জমিতে সেচ দিয়ে টাকা খরচ করে জমির আবাদ রক্ষা করতেন। বৃষ্টি হওয়ায় আবাদের বাড়তি খরচ থেকে রক্ষা পেয়েছেন কৃষকরা। তাই বোরোচাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন বৃষ্টির কারণে। এ ছাড়া আউশ, ভুট্টা, পাট, শাক-সবজির খেতও বৃষ্টির জন্য উপকৃত হয়েছে। এসব খেতে এ সময়ে পানির খুব প্রয়োজন ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় এসব খেতের ফসলও সজীব হয়ে উঠেছে। রংপুরের খাসবাগ এলাকার বোরোচাষি আসাদুজ্জামান, পীরগাছার আফজাল হোসেন, কল্যাণী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম, হারাগাছ এলাকার রমজান আলী জানান, এখন বোরো ধানের বয়স ৬০ থেকে ৭০ দিন হয়েছে। আমরা সেচের মাধ্যমে খেতে পানি দিতাম। এ সময় খেতে পানি দেওয়া খুব প্রয়োজন ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় একদিকে যেমন পানি দেওয়ার খরচ বাঁচল, অন্যদিকে ধানের শীষগুলোও সজীব হলো। ফলন ভালো হবে বলে মনে করছেন তারা। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা এলাকার ভুট্টাচাষি ইলিয়াস আহমেদ বলেন, এ সময় ভুট্টাখেতে পানির দরকার ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় ভুট্টার গাছগুলো আরও সজীব হয়েছে। ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছি।

মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দের সবজিচাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, তার খেতে বিভিন্ন ধরনের সবজি রয়েছে। বৃষ্টির কারণে সবজির খেতগুলোতে অনেক উপকার হয়েছে। ফলনও ভালো হবে বলে তিনি আশা করেন।

কৃষি অফিস জানায়, এ অঞ্চলে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার হেক্টর এবং আউশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার হেক্টর।

কৃষি অফিস ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকরা বোরো আবাদে প্রতি একরে সেচ দিতে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা ব্যয় করছেন। সে হিসাবে প্রতি হেক্টরে তাদের ব্যয় হচ্ছে তিন হাজার টাকা। একটি জমিতে সেচ দিতে হয় কমপক্ষে ২০ বার। বর্তমানে ধানের বয়স ৬০ থেকে ৭০ দিন। গোলায় ওঠার আগে কমপক্ষে আরও চার থেকে পাঁচবার সেচ দিতে হবে। কৃষকদের ধারণা, বৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে আবাদে তাদের বাড়তি প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচের হাত থেকে বেঁচে যাবে।

অপরদিকে পাটচাষিও রয়েছেন স্বস্তিতে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে পাটচাষিরা পানির জন্য হাহাকার করেন। এ সময় বৃষ্টি মহৌষধ হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন পাটচাষি ফেরদৌস আলী ও রতন মিয়া। 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও দু-একদিন এ ধরনের আবহাওয়া থাকবে।

রংপুর কৃষি সম্পাসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, এ বৃষ্টি রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের জন্য আর্শীবাদ। কারণ এ অঞ্চলের ধান পাকতে আরও এক মাস সময় লাগবে। তবে দেশের অন্য স্থানে যেসব জায়গায় ধান পেকেছে তাদের একটু সমস্যা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর