শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার ‘ব্যাটেলফিল্ড’ চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোনে নিচ্ছে সেবা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সুবিশাল ফ্লোরজুড়ে রয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। নিরাপদ দূরত্বে সারি সারি শয্যা। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও দক্ষ নার্স টিম আউটডোর ও ইনডোরে ব্যস্ত রোগীদের সেবায়। নিবেদিতপ্রাণ এ স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মকান্ড পেশাদার হলেও মাত্র দিন বিশেক আগেও এ ফ্লোরটি ছিল নিচক একটি অটোমোবাইলের জন্য প্রস্তুতকৃত কারখানা। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার এক পরিকল্পনায় দিন কয়েকের মাথায় এটি পরিণত হয়েছে ফিল্ড হাসপাতালে। যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চট্টগ্রামের ‘ব্যাটেলফিল্ড’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এরই মধ্যে। চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর জন্য আইসিইউসহ সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা রয়েছে এ ফিল্ড হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসক ছাড়াও দেশি-বিদেশি অনেক চিকিৎসক অনলাইনের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেবেন। মোবাইলে যোগাযোগ করেও অনেকে সেবা নিচ্ছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরামর্শের জন্য হটলাইন নম্বরে ফোন দিচ্ছেন।’ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘ফিল্ড হাসপাতালটি করোনা প্রতিরোধে আমাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এ ফিল্ড হাসপাতালটির মাধ্যমে আরও বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা এবং জরুরি মুহূর্তে আইসিইউ সেবা পাবে। হাসপাতালটি বিআইটিআইডির পার্শ্ববর্তী হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলও পাওয়া যাবে।’

 চট্টগ্রাম নগরী ও সীতাকুন্ডের মাঝামাঝি এলাকায় ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশনাল ডিজিজের (বিআইটিআইডি) অদূরে তৈরি করা হয়েছে চট্টগ্রামের প্রথম ফিল্ড হাসপাতালটি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিলে এগিয়ে আসে একটি শিল্প গ্রুপ। তারা ছয় হাজার ৮০০ বর্গফুটের একটি প্রস্তুত ফ্লোর দেয় ফিল্ড হাসপাতালের ব্যবহারের জন্য। এরপর এ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তুলতে এগিয়ে আসেন মানবিক কিছু মানুষ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান। ঘোষণার ২০ দিনের মধ্যেই তৈরি হয় চট্টগ্রামের প্রথম ফিল্ড হাসপাতালটি। নিরাপদ দূরত্বে সুবিশাল জায়গাজুড়ে এ হাসপাতাল গড়ে ওঠে। যাতে রয়েছে সাধারণ ৬০ শয্যা। অত্যাধুনিক ভেন্টিলেটরসহ আছে ১০টি আইসিইউ। প্রাথমিকভাবে ১০ চিকিৎসক দিয়ে গঠন করা হয়েছে টিকিৎসক টিম। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত থাকবেন দেশি-বিদেশি কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। প্রয়োজনে তারা অনলাইনের মাধ্যমে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনজন চিকিৎসক ও পাঁচজন নার্স সার্বক্ষণিক পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৬০ জনের বিশাল একটি টিম। এ ফিল্ড হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর এ হাসপাতাল নিয়ে সাধারণ লোকজনের কাছে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকে সর্দি, জ্বর কাশি নিয়ে সেবা নিতে এসেছেন এ হাসপাতালে। গত দুই দিনে সরাসরি ও মোবাইলে এ ফিল্ড হাসপাতালের সেবা গ্রহণ করেছে কমপক্ষে ৫০ জন। যাদের মধ্যে একজনের করোনাভাইরাস সংক্রমণের সন্দেহে ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল তার পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। 

হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের আউটডোরে যারা আসছেন সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক দল যাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ পাচ্ছেন না তাদের অন্য হাসপাতালে রেফার করছেন। এক্ষেত্রে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয় এমন একটি সার্টিফিকেটও দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা অন্য হাসপাতালে গিয়ে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর