শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ময়মনসিংহ বিভাগে কমছে চিকিৎসক, বাড়ছে রোগী

অধিকাংশ চিকিৎসক কোয়ারেন্টাইনে

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

গত ১৬ এপ্রিল শেরপুরের এক প্রসূতি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের তথ্য গোপন করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ওয়ানস্টপ সার্ভিস হয়ে, গাইনি বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ ও আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসা নেন। পর দিন ওই মহিলা সন্তান প্রসব করেন। এরপর তার অবস্থার অবনতি হলে পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত। আর সংক্রমিত করেছেন গাইনি বিভাগের নয় চিকিৎসক ও সাত নার্সসহ ১৭ জনকে। বন্ধ করা হয়েছে একটি অস্ত্রোপচার কক্ষ। এর আরও চার দিন আগে পেটে ব্যথার কথা বলে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আমীর আলী নামের একজন ভর্তি হন মমেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে। পর দিনই তিনি করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হন। ভর্তি থাকা ২৫ রোগীসহ সন্ধ্যায় ওয়ার্ডটি লকডাউন করা হয়। আর চিকিৎসকদের পরামর্শ দেওয়া হয় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার। একই ঘটনায় বন্ধ হয় কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট। গত ১৩ এপ্রিল কিডনি ডায়ালাইসিস করার পর জানা যায় তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আর এ ইউনিটের ১০ জন চিকিৎসক, নয়জন নার্স ও চারজন ওয়ার্ড বয় মিলিয়ে মোট ২৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হচ্ছে যে, গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন আর জরুরি সেবা ছাড়া কিছুই করা হচ্ছে না। ওই হাসপাতালটিতে চিকিৎসক-নার্সসহ আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় ৭৪ জনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের ৪৭ জনের শরীরে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি। আর প্রাণ হারিয়েছেন নয়জন। সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম মশিউল আলম বিষয়গুলো নিশ্চিত করে জানান, এভাবে তথ্য গোপন করে করোনা আক্রান্তরা চিকিৎসা নিলে সব চিকিৎসকই করোনায় আক্রান্ত হবেন। দিন দিন কমবে চিকিৎসক, বাড়বে রোগী। ভেঙে পড়বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। 

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক জানান, এ মুহূর্তে এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালটি করোনা সংক্রমণের সবচাইতে বড় হটস্পট। বৃহত্তর ময়মনসিংহের একমাত্র সেবাদানকারী এ হাসপাতালটি হয়তো অচিরেই কর্তৃপক্ষ বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

এমন চিত্র শুধু ময়মনসিংহ জেলারই নয়। ইতিমধ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ি ও নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন করা হয়েছে। আংশিক সেবা দেওয়া হচ্ছে শ্রীবরদি ও ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ জেলায় মোট ২৬ জন আক্রান্ত হলেও এর অর্ধেকই স্বাস্থ্য বিভাগের। পিছিয়ে নেই জামালপুর জেলাও। দুজন চিকিৎসক, তিনজন নার্স ও স্বাস্থ্য বিভাগের জড়িত আটজনসহ মোট ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন কভিড-১৯ এ। মারা গেছেন আরও তিনজন। তবে কিছুটা চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতদের আক্রান্তের ঘটনা অনেকটাই কম নেত্রকোনা জেলায়। এ জেলায় ৩৩ জনের মধ্যে দুজন করে চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর